ডব্লিউএইচও’র শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান

সংক্রমণক্ষমতার উচ্চ হার থাকার কারণে প্রচলিত করোনাভাইরাস ও এর অভিযোজিত অন্য তিনটি ধরনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভাইরাসটির ভারতীয় ধরন ডেল্টা। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর শীর্ষ বিজ্ঞাণী সৌম্য স্বামীনাথান।

সংবাদ সম্মেলনে স্বামীনাথান বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে বড় দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। কারণ, প্রচলিত সার্স-কোভ-২ (করোনাভাইরাস) এবং তার প্রধান চারটি ধরনের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ডেল্টা। বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইতোমধ্যে ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

ব্রিটেনে ইতোমধ্যে ব্যাপক সংখ্যক ডেল্টায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানী মস্কোসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ডেল্টায় আক্রান্ত।

জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়লয় জানিয়েছে, সেখানে ব্যাপকমাত্রায় টিকাদান কর্মসূচি চলা সত্ত্বেও আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টার প্রকোপে পড়া রোগীর সংখ্যাই বেশি।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষসহ বিভিন্ন পশুপাখির মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ফলে ক্রমাগত অভিযোজন বা মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাস। পরিবেশ পরিস্থিতি ও আক্রান্তের শারিরীক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় মূল ভাইরাসটির পাশাপাশি এর কয়েকটি পরিবর্তিত/ অভিযোজিত প্রজাতিরও আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে, যেগুলোকে বিজ্ঞানের ভাষায় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন বলে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত মূল করোনাভাইরাসের ৪ টি প্রধান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্রিটেন ধরন, ব্রাজিলীয় ধরন, দক্ষিণ আফ্রিকা ধরন ও ভারতীয় ধরন।

সম্প্রতি ডব্লিউএইচও এই ধরনগুলোন নামকরণ করেছে গ্রীক বর্ণমালার ক্রমানুসারে। সেই অনুযায়ী, ব্রিটেন ধরনের নাম আলফা, ব্রাজিলীয় ধরনের নাম বেটা, দক্ষিণ আফ্রিকা ধরনের নাম গ্যামা ও ভারতীয় ধরনের নাম ডেল্টা দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রচলিত সার্স-কোভ-২ (করোনাভাইরাস) ভাইরাসের চেয়ে ডেল্টা ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। ভারতের চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমএস) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ডের ডোজকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আছে এই ভারতীয় ধরনটির।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের জন্য সংস্থাটির কাছে আবেদন করেছিল করোনা টিকা কিউরভ্যাক-এর প্রস্তুতকারী কোম্পানি। তবে ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত মান ও শর্ত পূরণ না হওয়ায় টিকাটি অনুমোদন করেনি সংস্থাটি। ডব্লিউএইচওর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মানবদেহে ৫০ শতাংশ করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম এই টিকা।

শুক্রবার এ বিষয়েও কথা বলেছেন সৌম্য স্বামীনাথান। সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউেএইচওর এই শীর্ষ বিজ্ঞানী বলেন, ‘কিউরভ্যাকের মেডিকেল ট্রায়ালের ফল ভালো ছিল, কিন্তু ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত মানে পৌঁছাতে না পারায় টিকাটির অনুমোদন দেওয়া যায়নি। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই টিকাটি ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত মানে পৌছানোর শর্তগুলো পূরণ করতে পারবে।’

এদিকে, আফ্রিকায় সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংস্থাটির জরুরি অবস্থা বিভাগের প্রধান মাইক রায়ান জানিয়েছেন, আফ্রিকার নামিবিয়া, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া ও রুয়ান্ডায় সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, আফ্রিকায় করোনায় আক্রান্ত বাড়লে সেটি বৈশ্বিকভাবেই বড় দুশ্চিন্তার ব্যাপার। কারণ টিকার ডোজের অভাবে আফ্রিকার অনেক দেশ এখনও টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে মাইক রায়ান বলেন, ‘এমন একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতায় আমরা এসে পৌঁছেছি যেখানে একদিকে এই ভাইরাসটির একের পর এক ধরন শনাক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে আফ্রিকার বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও করোনা টিকার একটি ডোজও পায়নি। কবে নাগাদ পাবে, তাও কেউ বলতে পারছে না।’

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ