আর্মেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তার দল ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গত বছর আজারবাইজানের কাছে যুদ্ধে পরাজয় ও নাগোরনো কারাবাখ হারানোর পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অচালবস্থা কাটাতে এই আগাম নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল।

অবশ্য আর্মেনিয়ার বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট কচারিয়ান বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান তা মানতে নারাজ। তার দাবি, নির্বাচনে তিনিই জিতেছেন। প্রাথমিক ফলাফলও তাই বলছে। আর্মেনিয়ায় আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছেন নিকোল পাশিনিয়ানই।

নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, মানুষ তার দলকে ফের দেশ শাসনের রায় দিয়েছে। বিশেষ করে মানুষ তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন করেছেন তিনি।

আর্মেনিয়ার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৩২ শতাংশ ইলেকটোরাল ডিস্ট্রিক্টের ফলাফল গণনা করা হয়েছে। তাতে পাশিনিয়ানের দল সিভিল কনট্র্যাক্ট পার্টি ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

এদিকে নির্বাচনে জয় দাবি করার পর সোমবার (২১ জুন) ভোরেই নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন পাশিনিয়ান। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী ইয়েরেভানের প্রধান চত্বরে সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তার দাবি, ‘আমরা জানি যে, নির্বাচনে আমরা বিশাল জয় পেয়েছি এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করেছি।’

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দ্বিতীয় স্থানে আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট কচারিয়ানের দল আর্মেনিয়া অ্যালায়েন্স পার্টি। তারা ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে এবং তিনি রুশপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত।

বিরোধী দলের দাবি, তাদের সমাবেশে প্রচুর মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। আর ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশ খুব ছোট হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উল্টো ফল হলো। ফলে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচনে কতোটা কারচুপি করেছে ক্ষমতাসীন দল।

যে কারণে আগাম নির্বাচন
তুরস্কের সামরিক সহায়তাপুষ্ট আজারবাইজানের কাছে গত বছর নাগোরনো-কারাবাখ যুদ্ধে পরাজিত হয় আর্মেনিয়া। টানা প্রায় দেড় মাসের সেই যুদ্ধে শোচনীয় ফলাফলের পর রাশিয়ার মধ্যস্ততায় গত বছরের নভেম্বরে আজারবাইজানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে নিকোল পাশিনিয়ানের সরকার।

এরপর থেকেই আর্মেনিয়ায় সরকারবিরোধী প্রবল বিক্ষোভ হয়েছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী নাগোরনো-কারাবাখের বাকি অংশ থেকেও আর্মেনিয়ার সেনাকে সরে আসতে হয়। এরপর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। পাশিনিয়ান তখন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আর্মেনিয়ার ২৬ লাখ ভোটারের জন্য মোট দুই হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এই নির্বাচনের দিকে রাশিয়া ও তুরস্কসহ অনেক পশ্চিমা দেশই তাকিয়ে ছিল। ২০টি রাজনৈতিক দল ও চারটি ইলেকটোরাল ব্লক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। কিন্তু লড়াইটা ছিল পাশিনিয়ানের দলের সঙ্গে আর্মেনিয়া অ্যালায়েন্স পার্টির।

৪৬ বছর বয়সী পাশিনিয়ান ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আজারবাইজানের সঙ্গে অসম্মানজনক শান্তিচুক্তির পর তার জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশিনিয়ান বলেছিলেন, এই চুক্তি জরুরি ছিল। না হলে আর্মেনিয়ার আরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।

আর সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট কচারিয়ানের নেতৃত্বাধীন আর্মেনিয়া অ্যালায়েন্স পার্টির প্রতিশ্রুতি ছিল, জিততে পারলে তারা নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে ফের আলোচনা করবে। তবে পরাজয়ের পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি

টিএম