বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ চুক্তি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জ্যাকোপা)-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে ভিয়েনায় যে আলোচনা চলছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

তবে তিনি এও বলেছেন, ইরান সবসময়ই তার জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং আলোচনার ক্ষেত্র কেবল পরমাণু প্রকল্পের মধ্যেই রাখতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প বিষয়ক কোনো আলোচনার জন্য ইরান মোটেই প্রস্তুত নয়।

সদ্য শেষ হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সোমবার প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সামনে আসেন রাইসি। তেহরানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভিয়েনায় আলোচনা সফল হোক, তা আমরা আন্তরিকভাবেই চাই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- ইরান তার জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং ভিয়েনার আলোচনা শুধুমাত্র পরমাণু প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা করতে ইরান প্রস্তুত নয়।’

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন- এই ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ চুক্তি জ্যাকোপা স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী- ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে এবং এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

ইরানের চিরবৈরী হিসেবে পরিচিত দুই দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েল শুরু থেকেই জ্যাকোপার বিরোধিতা করেছে। সেই পথ ধরে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জ্যাকোপাকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। ফলে চুক্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় এবং কার্যত সুতোয় ঝুলতে থাকে জ্যাকোপা।

এদিকে, গত কয়েক বছরে স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছে ইরান এবং বর্তমানে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারও বেশ সমৃদ্ধ। এই ব্যাপারটি নতুন উদ্বেগ আকারে হাজির হয়েছে জ্যাকোপাতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর সামনে।

২০১৫ সালে যখন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তখন এমন ছিল না। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ন্ত্রণেও ইরানের সঙ্গে একটি রফায় আসতে চাইছে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো।

তার জেরই সোমবার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের বিষয়ে ইরানের অবস্থান স্পষ্ট করলেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।

রোববার ইরানের পরমাণু বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী আব্বাস আরাকশি বলেন, ‘ভিয়েনায় জ্যাকোপা বিষয়ক আলোচনা সফলভাবে এগোচ্ছে। কিন্ত গত কয়েকবছরের ব্যাবধানে যে ফাঁকগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা কঠিন।’  

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ