ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবি পুড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর ইরানি এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির বাইরে থেকে পরিচালিত বিরোধীদের গণমাধ্যমের খবরে এই মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন শোকাহতরা।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় লোরেস্তান প্রদেশের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম ওমিদ সারলাক। শুক্রবার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে দেখা যায়, তিনি একটি বনের মাঝে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটনার এক সপ্তাহ না যেতেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ আলিগুদারজ শহরের পুলিশপ্রধান আলি আসাদোল্লাহির বরাত দিয়ে বলেছে, এক ব্যক্তির মরদেহ গাড়ির ভেতর পাওয়া গেছে এবং পাশে একটি পিস্তল ছিল। তিনি নিজে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

তবে সোমবার সারলাকের জানাজায় উপস্থিত লোকজন ‌‘‘তাকে খুন করা হয়েছে’’ এবং ‘‘খামেনির মৃত্যু চাই’’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। জানাজায় বিক্ষুব্ধ লোকজনের বিক্ষোভের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকে পরিচালিত বিরোধীদের গণমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও রেডিও ফারদা এই ভিডিও প্রচার করেছে।

অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ২০ বছর বয়সী সারলাক দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির কণ্ঠের একটি রেকর্ড বাজাচ্ছেন। এর মাধ্যমে ওই যুবক যে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে উৎখাত হওয়া রাজতন্ত্রের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, সেই বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শাহর ছেলে রেজা পাহলভি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সারলাক ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ইরানের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’’

সোমবার ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি ‘‘বিপ্লববিরোধী গণমাধ্যমের’’ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সারলাকের বিরুদ্ধে কোনও মামলা ছিল না এবং তিনি নিজেই মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে সারলাকের বাবাকে কাঁদতে দেখা যায়। সেখানে তিনি বলছেন, ‘‘ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।’’ যদিও পরবর্তীতে স্থানীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছেন, তা বিশ্বাস করবেন না।’’

ইরানি মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তিন বছর আগে দেশজুড়ে প্রতিবাদ এবং চলতি বছরের জুনে ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের সরকার আবারও ভিন্নমত দমনে অভিযান জোরদার করেছে।

ইরানে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত মাই সাতো গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ইরানে বাইরের আগ্রাসন অভ্যন্তরীণ দমন অভিযানকে আরও তীব্র করে তুলেছে। তিনি দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার ও বিরোধীদের ধরপাকড় উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।

সূত্র: এএফপি।

এসএস