ভাতার রাজনীতিই কি ভোটের ভবিষ্যৎ
ভারতের বিহারে নীতীশ কুমারের বিপুল জয়ের কারিগর নারী ভোটাররা। সেখানে এবার বিধানসভা ভোটে নারীরা পুরুষদের থেকে বেশি ভোট দিয়েছেন।
নারীদের ভোটদানের হার ছিল ৭১.৬ শতাংশ, যা পুরুষদের থেকে ৯ শতাংশ বেশি। তাই মনে করা হচ্ছে, এই ভোটেই মহাগঠবন্ধনকে পেছনে ফেলেছে এনডিএ।
বিজ্ঞাপন
বিহারে এম-ফ্যাক্টর
দীর্ঘ দুই দশক ক্ষমতায় থাকার পরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়া ওঠা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনের আগে তার সরকারের একটা মাস্টার স্ট্রোক তফাৎ গড়ে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভোটমুখী বিহারে নীতীশ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা। এই প্রকল্পে প্রতিটি পরিবারের একজন নারী ব্যবসা করার জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা পাবেন। এই ব্যবসায় তিনি যদি কিছুটা সফল হন, তাহলে পরবর্তীতে সরকার প্রত্যেক নারীকে দুই লাখ টাকা দেবে। রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পরেও প্রায় ৭৫ লাখ নারী টাকা পেয়েছেন। প্রায় দেড় কোটি নারী এখনো পর্যন্ত এই টাকা পেয়েছেন বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।
বিজ্ঞাপন
২৬ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের সূচনা হয়। নির্বাচনের ঘোষণা হয় ৬ অক্টোবর। এই ঘোষণার দিন ছাড়াও ভোট প্রচারের সময়ে পাঁচটি কিস্তিতে নারীরা টাকা পেয়েছেন। এই প্রকল্পের বড় বড় বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে সংবাদপত্রে। কিন্তু এনিয়ে নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করেনি।
বিরোধী রাষ্ট্রীয় জনতা দল সামান্য আপত্তি তুললেও কমিশনের কাছে জোরদার প্রতিবাদ জানায়নি। বরং তাদের নেতা তেজস্বী যাদব নির্বাচনী জনসভায় বিকল্প নারীকেন্দ্রিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। ‘মাই বহিন মান যোজনা’ শুরু করার কথা বলেছিলেন তিনি। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে নারীদের মাথাপিছু আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল বিরোধী নেতার।
নারীদের সরাসরি টাকা দেওয়া ছাড়াও বিহারে ২০১৬ থেকে মদ নিষিদ্ধ থাকার ফলে নারীরা নীতীশকে বেশি ভরসা করেছেন। এর পাশাপাশি নারীদের জন্য পঞ্চায়েত ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এনডিএ সরকার।
তেজস্বী যাদব থেকে জনসুরাজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোর মদে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু নীতীশের সিদ্ধান্ত বিহারের পারিবারিক সহিংসতা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের শাসনে জঙ্গলরাজের তীব্র প্রচার আইন শৃঙ্খলা ও সুরক্ষার প্রশ্ন আরও বেশি সংখ্যায় নারীদের স্থিতাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
রাজ্যে রাজ্যে প্রকল্প
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উপভোক্তার হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার ফলে নির্বাচনী সাফল্য লাভ ভারতীয় রাজনীতিতে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মধ্যপ্রদেশ কিংবা তেলেঙ্গানায় একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বস্তুত দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে বহু আগে থেকেই ভোটারের হাতে সরাসরি অর্থ বা উপঢৌকন তুলে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেয়। তফসিলি জাতি ও উপজাতির নারীদের ক্ষেত্রে এই টাকার অঙ্ক মাসে ১২০০ টাকা। আগে ৬০ বছরের বেশি বয়সের নারীরা এই টাকা পেতেন না। এখন তাদেরও প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে দুই কোটি ২০ লাখেরও বেশি নারী এই প্রকল্পে প্রতি মাসের গোড়ায় নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে যান। রাজ্য সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, সময়ের সঙ্গে এই ভাতার অঙ্ক বাড়বে। তাই ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের মতো দেশের নজর কেড়েছে মধ্যপ্রদেশের ‘লাডলি বহেন যোজনা’। ২০২৩ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়। নারীদের মাথাপিছু হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। পরে এই অংক বাড়িয়ে ১২৫০ টাকা করা হয়। চলতি মাস থেকে এই প্রকল্পে নারীরা দেড় হাজার টাকা করে পাবেন বলে ঘোষণা করেছে বিজেপি সরকার। এক কোটি ২৬ লাখেরও বেশি নারী মধ্যপ্রদেশে এই প্রকল্পের সুবিধা পান।
তেলেঙ্গানাতে নারী ভোটারদের জন্য চালু রয়েছে ‘মহালক্ষ্মী প্রকল্প’। এতে ফ্রি বাস সফরের পাশাপাশি মেলে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসার পেছনে এমনই প্রকল্পের হাত রয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করে সেখানে তারা চালু করেছে ‘মহতরী বন্দনা যোজনা’, যাতে ২১ বছরের বেশি বয়সের নারী প্রতি মাসে হাজার টাকা পান। গত বছর মহারাষ্ট্রে বিজেপির ক্ষমতায় আসার পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লড়কি বহিন যোজনা’।
ভাতার ভালো-মন্দ
অনুদানের রাজনীতি নিয়ে নানা মত বিশেষজ্ঞদের। এর গুরুত্ব স্বীকার করলেও অনেকেই অনুদান রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ শুভনীল চৌধুরী বলেন, “ডোল পলিটিক্স (ভাতা বা অনুদান রাজনীতি) শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। আদানি-আম্বানিদের এক টাকায় জমি বা লক্ষ-কোটি টাকার কর ছাড় দেওয়া ডোল হবে না কেন? আবার সাধারণ মানুষকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যে তাদের উন্নতি হবে না, এ কথাটাও ঠিক। বিহার খুবই গরিব রাজ্য। মাথাপিছু আয় সবচেয়ে কম। বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। এমন একটা গরিব রাজ্যে মানুষকে যদি টাকা দেওয়া হয়, তার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিল্প তৈরি করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাল শুধরোতে হবে। সেই উন্নয়নের কথা না ভেবে ভোটের ঠিক আগে মানুষকে টাকা দেওয়াটা কোনো সঠিক অর্থনৈতিক নীতি নয়।”
অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি বলেন, “অনুদানের রাজনীতিতে প্রথম প্রথম মানুষ খুশি হয়। তারপরে যদি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন না করা যায়, তারাই অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। যিনি ১০ হাজার টাকা পেলেন, তার স্বামী কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য দরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামোর উন্নতি ও কর্মসংস্থান তৈরি। কিন্তু এখন অনুদানের রাজনীতির একটা প্রতিযোগিতা চলছে। এই অনুদান টার্গেটেড গ্রুপকে দেওয়া দরকার, কিন্তু দরিদ্র মানুষকে চিহ্নিত করা মুশকিল। কিন্তু এটা কি চিরকাল চলতে পারে? টাকা তো একসময় শেষ হয়ে যাবে। অনুদানের রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পক্ষে সুবিধাজনক নয়, এটা বলতেই হয়।”
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেক বিশেষজ্ঞ জনতার হাতে সরাসরি টাকা দিয়ে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ বলেন, “মানুষের হাতে টাকা দিয়ে চাহিদা সৃষ্টি করে জিনিসের ক্রয় বাড়ানোর কথা অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন। কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা না দিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি বা হাঁসমুরগি প্রতিপালন, চিকিৎসা প্রকল্পে স্বাস্থ্যকর্মীদের টাকা দিলেও চাহিদা সৃষ্টি হবে। তারাও টাকা খরচ করবেন। কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্য দপ্তরের বাজেট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।”
সত্যিই নারীর ক্ষমতায়ন?
নগদ টাকা দেওয়া এক অর্থে ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করলেও সেটাই কি যথেষ্ট?
অশোক লাহিড়ি বলেন, “নারীর হাতে টাকা দেওয়ার ফলে তার ক্ষমতায়ন হচ্ছে, এটা ঠিক। নারীরা সাধারণভাবে নিজেরা রোজগার করতেন না, তারা স্বামীর অর্থের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। স্বামী টাকা দিলে তাদের হাতে কিছু টাকা আসত। সরকার টাকা দেওয়ায় তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায়নের মূল অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষা। একটি মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে দিলে তার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।”
একই সঙ্গে উঠে আসছে কর্মসংস্থানের প্রশ্ন। তার বিকল্প কি হতে পারে ভাতা?
রতন খাসনবিশ বলেন, “স্থায়ী নিয়োগ সৃষ্টি না করতে পারলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। নারীদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার বদলে তাদের পরিবারের একজনের চাকরির ব্যবস্থা করলে ওই নারীর আর ভাতার দরকার পড়বে না। নিয়োগ হলেই প্রকৃত অর্থে মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারেন।”
শুভনীল বলেন, “গ্রামের একজন নারী ১০ হাজার টাকা পেলেন, কিন্তু তার বাড়ির ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল বা হাসপাতাল নেই, তাহলে কিসের উন্নয়ন? সরকার তার মৌলিক দায়িত্ব পালন করার বদলে ভোট কেনার রাজনীতি করছে। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তার উদ্দেশ্য নারীর ক্ষমতায়ন নয়। গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ায় সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, শুধু ওইটুকুই করা হচ্ছে, আর কিছু করা হচ্ছে না। নাগরিক পরিষেবা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের কয়েক হাজার স্কুলে শিক্ষক নেই, অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কে দেখবে? এখানে তো পূজা কমিটিকেও টাকা দেওয়া হয়। এটা কি সরকারের কাজ? সিঙ্গেল ইঞ্জিন, ডাবল ইঞ্জিন সব সরকারের ক্ষেত্রেই দেখছি, গরিব মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা নেই। তবু গরিবরা টাকা পাচ্ছেন, নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো, এটুকুই ইতিবাচক।”
রাজনীতির কৌশল
সহজেই ভোট কুড়োনোর কৌশল হিসেবে কি অনেক দল ভাতা রাজনীতিকে ব্যবহার করছে?
সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেন, “গরিব রাজ্যে নারীদের ভোটদানের হার বেশি। বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এই ট্রেন্ড দেখা যায়। আবার ধনী রাজ্যে এর উল্টো ছবি। যেমন মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ইত্যাদি। গরিব রাজ্যে নারীদের জন্য সরকারের কিছু প্রকল্প চলে। এর মাধ্যমে এই ভোটারদের সঙ্গে সরকারের একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক তৈরি হয়। নারীরা মনে করেন, আমি এতটা পেয়েছি, বিনিময়ে আমার কিছু দেওয়া উচিত। একটা নৈতিক সম্পর্কও তৈরি হয়। তাই বিহারের ক্ষেত্রে মহাগঠবন্ধনের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত যাদব বা মুসলমান সমাজের নারীদের একাংশ নীতীশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।”
অশোক লাহিড়ি বলেন, “নির্বাচন তো পাঁচ বছর পরে। রাজনৈতিক দল চায়, আজ সরকার কিছু করলে নির্বাচনে যেন তার সুফল পাওয়া যায়। তাতে যেন দলের ভোট বাড়ে। কিন্তু এমন একটা কিছু তারা করল, যাতে স্বর্ণযুগ চলে এল, কিন্তু সেটা এল ১০ বছর পরে। তত দিনে সেই দল নির্বাচনে হেরে বিদায় নিতে পারে। কম সময়ে ফল দেবে আমরা এরকম গাছ খুঁজি। তাই এখন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য ইতিবাচক কিছু করা হচ্ছে না। এতে পরিযায়ী শ্রমিক বাড়বে, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারা চলে যাবেন গুজরাট, কর্নাটক, কেরালায়।”
শুভাশিসের বক্তব্য, “আমাদের রাজনীতি এখন উত্তর-আদর্শবাদের যুগে রয়েছে। সিপিএম বা কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন তাদের একটা মতাদর্শ ছিল। এখন আদর্শের বদলে অনুদানের উপরে নির্ভর করে রাজনীতি হচ্ছে। একটা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে আগেও এটা ছিল। ৬০-এর দশকে অন্ধ্রপ্রদেশে এনটি রামা রাও দুই টাকা কেজি চাল দিয়ে কংগ্রেসকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে এখনকার অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লি ও পাঞ্জাবে একই কাজ করেছেন। যদিও তিনি একইসঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের কথা বলেছেন।”
টিএম