চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে প্রায় সপ্তাহজুড়ে টানাপোড়েনের পর শেষে বন্ধই হয়ে গেল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

চীনের বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১৭ জুন পত্রিকাটির অফিসে অভিযান চালিয়েছিল দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলারের সম্পত্তি জব্দ করা হয়, গ্রেফতার করা হয় পত্রিকটির প্রধান সম্পাদকসহ ৫ নির্বাহীকে।

হংকংয়ে ট্যাবলওয়েড এই পত্রিকাটি চলছে গত ২৬ বছর ধরে। শুরু থেকেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং পার্টির হংকং শাখার নেতৃবৃন্দের কড়া সমালোচক ছিল এই পত্রিকাটি।

এর জেরেই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনভঙ্গের অভিযোগে গত ১৭ জুন অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। পাত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই এই অভিযোগে বর্তমানে কারাবন্দি আছেন। এছাড়া দুই বছর আগে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে তার সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ এনেছে হংকং পুলিশ।

অ্যাপল ডেইলির ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পত্রিকাটির কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করেই এটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই পত্রিকাটির শেষ মুদ্রিত সংখ্যা বেরোবে। পত্রিকাটির অনলাইন সাইটে দেখা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর সাইটটিতে নতুন কোনো নিউজ আপলোড করা হয়নি।

অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই

অবশ্য পত্রিকাটি যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে ২১ জুন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অ্যাপল ডেইলির উপদেষ্টা মার্ক সাইমন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছিলেন, ‘টাকা না থাকলে কাজ করা যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার যদি ব্যয় নির্বাহের অর্থ না থাকে, তবে আপনি আপনার কোনো কর্মীকেই অর্থ দেওয়ার কথা দিতে পারেন না। হংকংয়ে এটি অবৈধ।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সংবাদমাধ্যমটি এখনো টিকে আছে। তবে জব্দ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে না দিলে এটি বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র।’

রয়টার্সকে তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির জব্দ করা ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে না দেয়, সেক্ষেত্রে ২৬ জুন অ্যাপল ডেইলির শেষ সংখ্যা বের হবে। অবশেষে তার ভবিষ্যৎবানীই সত্য হলো।

বুধবার বিবিসিকে মার্ক সাইমন জানান, পত্রিকাটি বন্ধ করা ও এতে কর্মরত সংবাদকর্মীদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে মঙ্গলবার একটি বোর্ড মিটিং-এর আয়োজন করেছিল অ্যাপল ডেইলির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে এক সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে চাইছি, কিন্তু তাদের (হংকং পুলিশ) তর সইছে না। সর্বশেষ অভিযানের মধ্যে দিয়ে তারা বলতে চেয়েছে- যত দ্রুত সম্ভব এটি (অ্যাপল ডেইলি) বন্ধ কর।’

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি পত্রিকা অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ভোরে অভিযান চালায় হংকং পুলিশ।

জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হংকংয়ে সংবাদপত্র কার্যালয়ে সেই ছিল প্রথম পুলিশি অভিযান। ওই দিন পুলিশের ৫০০ সদস্য পত্রিকাটির বার্তাকক্ষে প্রবেশ করে।

অভিযানে পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের কম্পিউটার ও নোটবুক তল্লাশি করে এবং পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। বার্তাকক্ষের কম্পিউটারগুলোর সামনেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়।

এই অভিযান হংকংয়ের গণমাধ্যমের প্রভাবশালী ধনকুবের জিমি লাইয়ের ওপর আরেকটি বড় আঘাত, যিনি অ্যাপল ডেইলি ট্যাবলয়েডের মালিক এবং বেজিংয়ের নীতির একজন কড়া সমালোচক। নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন, গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতাসহ একাধিক অভিযোগে বর্তমানে হংকংয়ের কারাগারে বন্দি তিনি।

পুলিশের অভিযাগ, ২০১৯ সাল থেকে এই ট্যাবলয়েডটি ডজনখানেকের বেশি প্রতিবেদন ছেপেছে, যা হংকংয়ের নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে। তবে সবশেষ প্রতিবেদন কবে ছাপা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তারা।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ