সংযুক্ত আরব আমিরাতের কুখ্যাত আল-রাজিন কারাগারে ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী আল-খাজা নামে এক রাজনৈতিক বন্দি মারা গেছেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং এমিরেটস ডিটেইনিস অ্যাডভোকেসি সেন্টার (ইডিএসি) অভিযোগ করেছে, দীর্ঘকাল ধরে নির্যাতন, নিপীড়ন এবং চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই এই বন্দির মৃত্যু হয়েছে। 

৫৯ বছর বয়সী আলি আবদুল্লাহ ফাত আলি আল-খাজা নামের ওই বন্দিকে গত ১৯ নভেম্বর তার কারাগারের কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ইডিএসি বলছে, এর মাত্র একদিন আগেই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। আল-খাজা ২০১২ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হন এবং পরের বছর ‘ইউএই৯৪’ নামে পরিচিত রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের একটি গণবিচারে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সংযুক্ত আরব আমিরাত বিষয়ক গবেষক জোয়ি শিয়া বলেন, “আল-খাজার এই মৃত্যু বছরের পর বছর ধরে আমিরাত কর্তৃপক্ষের নির্বিচার কারাবাস, নির্যাতন এবং সামগ্রিক নিপীড়নের ফল, যদিও তার একদিনও জেলে থাকা উচিত ছিল না। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ও স্বচ্ছভাবে তার মৃত্যুর তদন্ত করতে হবে এবং পরিবার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

ইডিএসি জানিয়েছে, আল-খাজাকে ১৯ নভেম্বর সকালে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে খবর দেয় সেদিন সন্ধ্যায়। তার বাবার মৃত্যু হয় ৮ নভেম্বর, কিন্তু আল-খাজাকে সে খবর জানানো হয় ১০ দিন পর, ১৮ নভেম্বর।

আল-খাজা তার ১০ বছরের সাজা ২০২২ সালের আগস্টে শেষ করলেও আমিরাত কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসী হুমকি’র ভিত্তিহীন অজুহাতে তাকে আটক রাখে। এই ধরনের বন্দিদের জন্য দেশটির ২০১৪ সালের দমনমূলক সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখার সুযোগ তৈরি করেছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন আয়োজন করছিল, তখন আল-খাজাসহ অন্তত ৮৪ জন আসামির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ আনা হয়। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইডিএসি যৌথভাবে আল-খাজার মৃত্যুর দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, আটক অবস্থায় ঘটা সম্ভাব্য বেআইনি মৃত্যুর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীন, স্বচ্ছ এবং কার্যকর তদন্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এমিরেটস ডিটেইনিস অ্যাডভোকেসি সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক হামাদ আল শামসি বলেন, “আলি আল-খাজার হেফাজতে মৃত্যু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নির্যাতন, চিকিৎসার অবহেলা এবং নির্বিচার আটকের সরাসরি ফল।”

সংস্থা দুটি আমিরাত কর্তৃপক্ষের কাছে সকল বন্দিদের, বিশেষ করে ২০১৩ সালের গণবিচারে দণ্ডিতদের, অবিলম্বে সময়োপযোগী এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র : এইচআরডব্লিউ 

এনএফ