নিজের বিষাদময় ত্রুটির তলায় চাপা পড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষবেলায় এসে ক্ষমতা ও দেশের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে যে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তার সর্বশেষ ভিডিওবার্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিমহলে।

অধিকাংশের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের ‘পিঠ বাঁচাতে’ বা ‘দায়ে পড়ে’ জো বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প।

নিজের নড়বড়ে প্রশাসন এবং অভিশংসনের হুমকির মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশেষে বৃহস্পতিবার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন, অর্থাৎ গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেছেন তিনি।

তবে এমন এক সময়ে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন যখন তার বন্ধু এবং অনুগত ব্যক্তিরা একে একে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, দেশব্যাপী তাকে অভিশংসনের দাবি উঠছে, অপরাধে যুক্ততার যথাযথ প্রমাণ উপস্থিত রয়েছে, এমনকি প্রশ্ন উঠেছে তার মানসিক সুস্থতা নিয়েও।

যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি হবেন দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে।

ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর এ ঘটনার জন্য এক ভিডিওবার্তায় নিজের সমর্থকদের দোষারোপ করেছেন ট্রাম্প, পাশাপাশি জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছেন। দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের ফলাফল মানতে নারাজ ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাত্র ১২ দিন আগে নিজের পরাজয় মেনে নিলেন।

তবে তার ওই ভিডিওবার্তা ‘সাজানো’ ও ‘বাগাড়ম্বরপূর্ণ’ বলে মনে করছেন ট্রাম্পের নিজের ঘনিষ্ঠজনরাই।

তারা বলছেন, ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করলেও ক্যাপিটল ভবনে বৃহস্পতিবার যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার সমর্থকরা, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি সম্মান রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন- এ কথা বলার কোনো সুযোগই রাখেননি তিনি।

অন্যদিকে চার বছর সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে সাংস্কৃতিক ও বর্ণবিভাজনকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারে অভ্যস্ত ট্রাম্পের সমর্থকরা নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে যে এর ফলাফল অস্বীকার করতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের এখন সুস্থ হয়ে ওঠার সময়’ এই আহ্বানে তারা কতখানি সাড়া দেন- সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ট্রাম্পের বেপরোয়া মানসিকতার বিষয়ে সবাই জানেন। তাই তিনি তার সর্বশেষ ভিডিবার্তায় জো বাইডেনকে সত্যিকার অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন কী না সে বিষয়ে অন্যান্যরা তো বটেই, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতরাও সংশয়ে ভুগছেন।

ট্রাম্পের ভিডিওর প্রসঙ্গে তার এক উপদেষ্টা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘আমার ধারণা, হোয়াইট হাউসে নিজের সব জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর পদত্যাগ এবং আসন্ন অভিশংসনের ভয়ে বিভ্রান্ত হয়েই ট্রাম্প এই ভিডিও প্রকাশ করেছেন।’ ট্রাম্পের বেপরোয়া আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহণমন্ত্রী এলাইনে চাও এবং শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোসসহ সরকারের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, যারা পদত্যাগ করেননি তারা এখনও রয়েছেন শুধু দেশের প্রশাসনকে সচল রাখার স্বার্থে।

সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের সাবেক শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা (চীফ অব স্টাফ) জন কেলি জানিয়েছেন- তিনি যদি স্বপদে বহাল থাকতেন, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের বিদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদ্বির ‍শুরু করে দিতেন।

সাক্ষাতকারে ট্রাম্প সম্পর্কে কেলি বলেন, ‘তিনি খুবই এবং খুবই ত্রুটিযুক্ত একজন মানুষ।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস এর স্পিকার এবং নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা সিনেটর চাক শুমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউস থেকে জরুরিভিত্তিতে ট্রাম্পকে সরানো যায় কিনা সেবিষয়ে পরামর্শ করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের বিপজ্জনক এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতাপূর্ণ আচরণের প্রেক্ষিতে যত দ্রুত সম্ভব তাকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা আপনার পরামর্শ চাই।’ পেন্স অবশ্য সেই চিঠির জবাব দেননি।

সূত্র: সিএনএন।

এসএমডব্লিউ