২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ১০০ কোটিরও বেশি কিশোরী, যাদের সবার বয়স ১৫ বছর। একই বছর পরিবারের সদস্য কিংবা বিবাহিত/ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬০ কোটি ৮০ লাখ কিশোরী এবং এদেরও সবার বয়স ১৫ বছর।

গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট জার্নাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে কিশোরীদের ওপর পারিবারিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে আফ্রিকার সাব সাহারান অঞ্চলে এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারী নির্যাতনে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। দ্য ল্যানসেট জার্নালের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে ১৫ বছর বয়সী ২৩ শতাংশ কিশোরী পরিবারের সদস্য কিংবা বিবাহিত/ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়া যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে আরও ১৩ শতাংশ কিশোরী এবং ১৫ শতাংশ কিশোর।  ১৫ বছরের বেশি নারীদের মধ্যে নির্যাতনের শিকারদের হার আরও বেশি— ৩০ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে দ্য ল্যানসেট জার্নাল সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জরিপ পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি)-এর ২০২৩ সালের গবেষণাপত্র থেকে তথ্য সহায়তা নিয়েছে। জিবিডি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধীন্থ একটি সংস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “নারীদের প্রতি যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা কেবল মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পারিবারিক এবং যৌন নির্যাতনকারীরা কোনো না কোনো কারণে মানসিকভাবে ব্যাধিগ্রস্ত এবং এ ব্যাপারটি যদি আমরা দূর করতে চাই, তাহলে অবশ্যই এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হবে আমাদের।

পরিবারের পুরুষ সদস্য ও বিবাহিত/ঘনিষ্ঠ পুরুষ সঙ্গীদের নির্যাতক হয়ে ওঠার পেছনে কিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা, গভীর মানসিক অবসাদ, শৈশবে নির্যাতনের শিকার হওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ও সিজোফ্রেনিয়া (একপ্রকার মানসিক রোগ), মাদকসহ মোট ১৪টি কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ল্যানসেট এবং বলেছে, কিশোরী ও নারীদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে এসব কারণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

গত নভেম্বরে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত একটি বৈশ্চিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালে ভারতে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে ১জন নারী নিজের স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন; আর স্বামীর হাতে নিয়মিত নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হন এমন নারীর হার ভারতে ৩০ শতাংশ।

২০০০ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বে প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন নারী জীবনের স্বামীর হাতে নির্যাতন বা যৌন সহিংসতার শিকার। তারপর গত ২৫ বছরে এই পরিসংখ্যানে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ