সার্স-কোভ-২ বা নভেল করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে চীনের করোনা টিকাগুলো কম কার্যকর। তবে এই ভাইরাসটির অন্যান্য অভিযোজিত ধরন আলফা, বেটা, গ্যামা, কাপ্পা প্রভৃতির বিরুদ্ধে মানবদেহে কার্যকর প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি গঠনে সক্ষম চীনের টিকাসমূহ।

চীনের জনস্বাস্থ্য গবেষক ও ওষুধ বিষয়ক চীনের শীর্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা চায়নিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক উপ পরিচালক ফেং জিজিয়ান এই তথ্য জানিয়েছেন। অবশ্য তিনি এ ও বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী না হলেও ডেল্টার বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে চীনের টিকাসমূহ।

বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জিজিয়ান। সেখানেই এ কথা বলেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে সাক্ষাৎকারে অপারগতা প্রকাশ করেছেন দেশটির অন্যতম শীর্ষ এই গবেষক।

সাক্ষাৎকারে ফেং জিজিয়ান আরও জানান, চীনের ৭ টি কোরোনা টিকার মধ্যে ২ টিকে শিগগির ‘অকার্যকর’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। এর কারণ হিসেবে জিজিয়ান বলেন, ‘এই টিকা দু’টি মানবদেহে যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিরোধী শক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম নয়; সাম্প্রতিক গবেষণায় তার প্রমাণ মিলেছে।’

তবে কোন দুই টিকাকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে- তা জানাননি চীনের এই উচ্চ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ২১ মে থেকে ২১ জুন- এক মাসে ১৭০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তের ৮৫ শতাংশই ঘটেছে প্রদেশটির রাজধানী গুয়াংঝু শহরে। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন আক্রান্ত এই রোগীদের অধিকাংশই ডেল্টায় আক্রান্ত।

২০২০ সালে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল করোনাভাইরাসের এই অভিযোজিত ধরনটি। প্রথমদিকে করোনার ভারতীয় ধরন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও চলতি জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এটির নাম রাখে ডেল্টা।

এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রীক বর্ণমালা অনুসারে করোনাভাইরাসের এসব অভিযোজিত ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতাতেই ভারতীয় ধরনের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ডেল্টা।

ডব্লিউএইচওর গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ধরন বা সংস্করণ এই ডেল্টা। ভাইরাসটির অন্যান্য অভিযোজিত ধরনসমূহের তুলনায় ডেল্টার সংক্রমণক্ষমতা ৪০ শতাংশ বেশি।

এ পর্যন্ত বিশ্বের ৮০ টি দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এই ধরনটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গেল সপ্তাহে ডব্লিউএইচওর শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান ডেল্টাকে করোনার প্রধান ধরন (ডমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

চীনের গুয়াংডং প্রদেশে সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি ঘটেছে। এ সম্পর্কে ফেং জিজিয়ান বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গুয়াংডং-এ আক্রান্তদের মধ্যে যারা করোনা টিকা নিয়েছেন, তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা নেই। আর (আক্রান্তদের মধ্যে) যারা টিকা নেননি, তারা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে আছেন।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ