বেশিরভাগ অভিবাসীকেই ‘অবৈধ’ মনে করেন ইউরোপীয়রা
ইউরোপীয়দের অনেকেই ভুলবশত মনে করেন, তাদের দেশগুলোতে অবস্থানরত বেশিরভাগ অভিবাসী ‘অবৈধ’। সম্প্রতি ইউরোপের সাতটি দেশে পরিচালিত এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ইউরোপীয়দের মাঝে অভিবাসন বিরোধিতা তীব্রভাবে বেড়েছে। শুধু তাই নয়, তারা অভিবাসীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। এমনকি অভিবাসীদের বহিষ্কার করা হলেও তাদের আপত্তি নেই।
বিজ্ঞাপন
বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউগভ পরিচালিত এই জরিপে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের নাগরিকরা অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৪ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা মনে করেন ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাসরত অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা নিয়মিতদের তুলনায় ‘‘অনেক বেশি’’ বা ‘‘কিছুটা বেশি’’।
ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা মোট বিদেশিদের তুলনায় অনেক কম। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্রান্সে বসবাসরত মোট অভিবাসীর মাত্র ২১ ভাগ কোনো একসময় ‘নথিবিহীন’ বা অনিয়মিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের আরেক দেশে পোল্যান্ডেও এই জরিপ চালানো হয়েছে। ৩৬ ভাগ পোলিশ মনে করেন তাদের দেশে নিয়মিতদের চেয়ে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা বেশি। ২৮ ভাগ মানুষ করেন উল্টো, আর ২২ ভাগ মনে করেন নিয়মিত ও অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা সমান।
সাতটি দেশে করা জরিপে দেখা গেছে, সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে চান। খুবই সীমিত পরিসরে অভিবাসীদের জন্য সুযোগ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। এমন ভাবনায় সবার পেছনে রয়েছে পোল্যান্ড। দেশটির ৪৯ শতাংশ মানুষ অভিবাসীদের জন্য সীমিত সুযোগ রাখতে চান। আর জার্মানি ক্ষেত্রে সেটি ৬০ ভাগ।
সাতটি দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ (৪৬ থেকে ৫৩ ভাগ) নতুন করে অভিবাসী আসা সম্পূর্ণ বন্ধ করার পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছেন। এছাড়া বড় পরিসরে অভিবাসীদের বহিষ্কার কার্যকরের পক্ষেও তাদের সম্মতি রয়েছে।
৬৪ থেকে ৮২ ভাগমানুষ নতুন করে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ানোরও বিরোধিতা করেছেন।
কোন অভিবাসীদের বহিষ্কার করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ৭৮-৯১ ভাগ ইউরোপীয় নাগরিকেরা বেছে নিয়েছেন নিয়ম ভঙ্গকারী বা আইন অমান্যকারীদের। তাদের ভাষায় এই অভিবাসীরা ‘‘সুবিধা নিতেই’’ ইউরোপে এসেছেন। অনিয়মিত অভিবাসীদের বহিষ্কার করতে চান ৭৩ থেকে ৮৫ ভাগ ইউরোপীয় নাগরিক। বৈধ কাজের ভিসা ছাড়া অদক্ষ কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের বহিষ্কার চান ৬৬ থেকে ৮৫ ভাগ মানুষ।
নিয়ম মেনে চলা আশ্রয়প্রার্থী, বিদেশি শিক্ষার্থী এবং উচ্চ দক্ষতা বা সংকটপূর্ণ পেশায় কর্মরতদের বহিষ্কারের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখা যায়নি। ইউরোপীয় নাগরিকদের কাছে চিকিৎসকেরাই বেশি প্রশংসিত হয়েছেন।
জরিপে অংশ নেয়া খুব কম মানুষ অভিবাসন না কমানোর পরিবর্তে ‘‘করদাতার সংখ্যা বাড়ানো’’, ‘‘বৃহত্তর অর্থনীতি উন্নত করা’’ এবং ‘‘আন্তর্জাতিক মানবিক দায়িত্ব বজায় রাখা’’ গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।
জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল অভিবাসন তাদের দেশের জন্য ভালো নাকি মন্দ ছিল। জবাবে ৫৬ থেকে ৭৫ ভাগ মানুষ বলেছেন অনিয়মিত অভিবাসনের মন্দ দিকের কথা বলেছেন। আর নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।
এক্ষেত্রে স্প্যানিশরা সবচেয়ে ইতিবাচক ছিলেন। ৪২ ভাগ স্প্যানিশ নিয়মিত অভিবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফরাসি ও জার্মানরা ছিলেন সবচেয়ে নেতিবাচক। যথাক্রমে এই দুটি দেশের ৩৮ ভাগ ও ৩৯ভাগ মানুষ বলেছেন নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা খারাপ ছিল। উল্টোটা বলেছে ২২ ভাগ ও ২৪ ভাগ মানুষ।
৫২ ভাগ ফরাসি ও ৫৭ ভাগ জার্মান মনে করেন নিয়মিত অভিবাসনের মাত্রাও অতিরিক্ত ছিল। একই রকম মতামত দিয়েছেন ৪৮ ভাগ পোলিশ।তাছাড়া, ফ্রান্স, ইটালি ও জার্মানির অর্ধেকের বেশি মানুষ এবং ৪৭ ভাগ পোলিশ মনে করেন নিয়মিত অভিবাসীরাও সমাজে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না।
জরিপ সংস্থা বলেছে, ‘‘এটা স্পষ্ট যে নিয়মিত অভিবাসন অনিয়মিত অভিবাসনের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু শুধু ইউরোপীয়রা এটা জানলেই অভিবাসন ইস্যু চলমান ক্ষোভ শেষ হয়ে যাবে, তা নয়।’’
তারা বলেছে, অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ ‘‘অর্থনৈতিক কারণেরও বাইরে চলে গেছে, যা দিয়ে সাধারণত বেশি অভিবাসনকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়।’’ তারা বলেছে, “যে বা যারা এই সমস্যা সমাধান করতে চাইবেন, তাকে পরিচয়, অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় মূল্যবোধ নিয়ে গভীর উদ্বেগের চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।’’ ইনফোমাইগ্রেন্টস।
এসএস