অভিবাসন নীতি লঙ্ঘনের দায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হাঙ্গেরিকে জরিমানা করে রায় দিয়েছিল ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে)। সেই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে এবার ইউরোপীয় বিচার আদালতের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দেশটি।

২০২৪ সালে ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে) ইইউ আশ্রয় আইন বারবার লঙ্ঘনের জন্য দেশটিকে এককালীন ২০ কোটি ইউরো জরিমানা করে। এই জরিমানা পরিশোধে দেরি হলে প্রতিদিন ১০ লাখ ইউরো করে জরিমানা দিতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। মূলত অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় আশ্রয়ের সুযোগ বন্ধ করে রাখা এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বেআইনি আটকের জন্যই এই জরিমানা ধার্য্য করে আদালত।

এই জরিমানার অর্থ হাঙ্গেরির জন্য ইইউ তহবিল থেকে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় বিচার আদালতের (ইসিজে) বিরুদ্ধে করা মামলাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল কোর্টে দায়ের করেছে হাঙ্গেরি। দেশটির বিচারমন্ত্রী বেনসে তুজসন সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বুদাপেস্টে এ কথা জানিয়েছেন।

তুজসন বলেছেন, হাঙ্গেরি চূড়ান্ত রায়টি বাতিল করতে চাইছে না। কিন্তু ওই মামলার প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে ক্ষতিপূরণ দাবি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

• হাঙ্গেরির আইনি যুক্তি

বিচারমন্ত্রী তুজসন বলেছেন, আদালত প্রক্রিয়াগত নীতিমালা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ন্যায্য বিচারের অধিকার এবং যথাযথ যুক্তি উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা।

তিনি আরও বলেছেন, মামলার বিচারকাজ চলাকালে হাঙ্গেরিকে জানানো হয়নি, এত বড় জরিমানা আরোপ করা হতে পারে, যা দেশটির প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতাকেও সীমিত করে দিয়েছে।

তুজসন বলেছেন, আদালত কেন বিপুল অর্থ জরিমানা করেছে, তা সঠিকভাবে এবং যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করা হয়নি। এছাড়া, হাঙ্গেরিকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে, যা একইরকম মামলায় অন্য ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আরোপিত জরিমানার তুলনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

তবে, এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইউরোপীয় বিচার আদালত।

• ইইউর সঙ্গে বিরোধে হাঙ্গেরি

অভিবাসন নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন নিয়ে হাঙ্গেরি ও ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যখন বিরোধ চলছে, তখনই এই মামলাটি দায়ের করেছে দেশটি।

হাঙ্গেরি ইউরোপীয় মূল্যবোধের পদ্ধতিগত লঙ্ঘন করছে বলে বারবার সমালোচনা করে আসছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এমনটি আর্টিকেল-৭ অনুযায়ী দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানিয়েছে পার্লামেন্ট। আর্টিকেল ৭-এমন একটি ধারা, যা ইইউকে তার কোনো সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপীয় মৌলিক মূল্যবোধ গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে কিনা তা মূল্যায়নের অধিকার দেয়।

আর্টিকেল-৭ অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রের কিছু অধিকার স্থগিত করতে পারে ইইউ। এর মধ্যে একটি হলো ইইউ কাউন্সিলে সদস্য রাষ্ট্রের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া।

হাঙ্গেরির সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের দাবি, অভিবাসন নীতি জাতীয় ক্ষমতার আওতায় পড়ে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান আগেই বলেছেন, ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলো হাঙ্গেরির অভ্যন্তরীণ নীতিকে প্রভাবিত করতে আইনি ও আর্থিক চাপ প্রয়োগ করছে।

• পরবর্তী পর্যায়

হাঙ্গেরির মামলাটি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ আদালত বা জেনারেল কোর্ট অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পর্যালোচনা করবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে মামলার বাদীকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে ইইউ আইন গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তাতে হাঙ্গেরি প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, মামলাটি ইউরোপীয় বিচার আদালতের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নীতি বজায় রাখতে সচেষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাই আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের মামলায় সফল হওয়া খুবই বিরল। তবে, একটু অস্বাভাবিক মনে হওয়া মামলাটি এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে নজর কাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এসএস