বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ। প্রচুর নদ-নদী আর বৃষ্টির দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট একটি চিরস্থায়ী সমস্যা। তবে এই সংকট মেটাতে এবার এক অভাবনীয় আশার আলো দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। খুলনার পশুর নদী সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির গভীরে দুটি মিঠা পানির খনির সন্ধান পেয়েছেন তারা।

 উপকূলীয় এলাকায় অগভীর নলকূপের পানি সাধারণত লবণাক্ত থাকে এবং বৃষ্টির পানিও সারা বছর পাওয়া যায় না। এছাড়া আর্সেনিক ও দূষণের কারণে নিরাপদ পানির অভাব প্রকট। জাতিসংঘের হিসাবমতে, ৪১ শতাংশ বাংলাদেশি নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত।

এই সংকট সমাধানে কলাম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির গবেষকরা খুলনার পশুর নদী বরাবর গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ডেল্টায় এই অনুসন্ধান চালান। তাদের গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার কমিউনিকেশন্সে’ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা 'ডিপ-সেন্সিং ম্যাগনেটো টেলুরিক সাউন্ডিং' নামক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির কয়েক কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই পরীক্ষায় খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে দুটি বিশাল মিঠা পানির খনি বা ভাণ্ডার শনাক্ত করা হয়েছে। এমরধ্য উত্তরাঞ্চলে ২ হাজার ৬০০ গভীরে অবস্থিত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খনি এবং দক্ষিণাঞ্চলে ৮২০ ফুট গভীরে অবস্থিত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি খনি পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই খনিগুলোতে পানি জমা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে। ‘হিমযুগে’ যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেক কম ছিল, তখন বৃষ্টি ও বন্যার পানি মাটির নিচে জমা হয়েছিল। পরবর্তীতে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পলিমাটি এই পানির ওপর স্তরে স্তরে জমা হয়ে একে আটকে ফেলে। এই পলিমাটির শক্ত স্তরের কারণেই ওপরের লবণাক্ত পানি নিচে নামতে পারেনি এবং কয়েক হাজার বছর ধরে এই সুপেয় পানি সংরক্ষিত রয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই খনিগুলোতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার মিঠা পানি রয়েছে। তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, এই পানি উত্তোলনে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। যদি অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পানি তোলা হয়, তবে ওপরের লবণাক্ত পানি নিচে ঢুকে খনিগুলো নষ্ট করে দিতে পারে।

গবেষকদের মতে, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পানি ব্যবহার করা গেলে খুলনা অঞ্চলসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় কোটি কোটি মানুষের সুপেয় পানির সংকট স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।

এই গবেষণাটি চালিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে রয়েছেন ল্যামন্টের সাবেক এবং ডিপ ব্লু জিওফিজিক্সের গবেষক কেরি কি, নিউ মেক্সিকো ইনস্টিটিউট অফ মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজির নাফিস সাজিদ এবং মার্ক পারসন।

এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক আনোয়ার ভূঁইয়া, মাহফুজুর আর খান এবং কাজী এম আহমেদ।

সূত্র: স্টেট অব দ্য প্ল্যানেট

এমটিআই