পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর পদত্যাগ করেছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন। সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার আন্দ্রিয়াস নোরলেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।

গত ২১ জুন দেশটির পার্লামেন্টে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা ভোট দেওয়ায় সরকারের পতন ঘটে। সুইডিশ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও প্রধানমন্ত্রী সংসদের ভোটাভুটিতে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন।

পার্লামেন্টে আস্থাভোটে হেরে যাওয়ায় দেশটির ক্ষমতাসীন সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন পদত্যাগ অথবা নতুন সরকার গঠনে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠান সুইডেনের জন্য সর্বোত্তম কোনও সিদ্ধান্ত নয় উল্লেখ করে স্পিকারের কাছে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন লোফভেন।

লোফভেন পদত্যাগ করায় এখন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন স্পিকার আন্দ্রিয়াস নোরলেন।

 করোনাভাইরাস মহামারিতে নির্বাচন আয়োজন চরম বিপজ্জনক হতে পারে ইঙ্গিত করে এক সংবাদ সম্মেলনে লোফভেন বলেছেন, আগাম নির্বাচন সুইডেনের জন্য সর্বোত্তম কিছু নয়। 

আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। লোফভেন বলেছেন, এসব দিক বিবেচনায় আমি স্পিকারকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

নবনির্মিত ভবনের ভাড়া কমানোর পরিকল্পনা ঘিরে ক্ষমতাসীন মধ্য-বামপন্থী সরকারের ওপর থেকে লেফট পার্টি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী সুইডিশ ডেমোক্র্যাটরা পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের ডাক দেন। পরে গত ২১ জুন পার্লামেন্টে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্টের ৩৪৯ আইনপ্রণেতার মধ্যে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ১৭৫ ভোটের দরকার হলেও মোট ১৮১ জন স্টেফান নেতৃত্বাধীন সরকারের বিপক্ষে ভোট দেন। ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন ৫১ জন।

২০১৮ সালে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পর গ্রিন পার্টির সাথে আরও দুটি ছোট মধ্য-ডানপন্থী দল এবং লেফট পার্টির সমর্থন নিয়ে নড়বড়ে জোট গঠন করে সরকারে আসেন ৬৩ বছর বয়সী লোফভেন। তবে আবাসিক ভবনের ভাড়া হ্রাসের পরিকল্পনা ঘিরে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে; সেজন্য লেফট পার্টির নেতারা লোফভেনকে দায়ী করেছেন।

পদত্যাগপত্রে সরকারের বিকল্প হিসেবে কোনও জোট এখন পর্যন্ত দাঁড় করাতে না পারায় বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন লোফভেন।

তিনি বলেছেন, সরকারের বিকল্প ছাড়াই তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভোট দিয়েছে। লোফভেন পদত্যাগ করায় নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে পেতে এখন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার আন্দ্রিয়াস নোরলেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন। লোফভেন পদত্যাগ করলেও নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করবে তার সরকার।

সূত্র: এএফপি।

এসএস