পরপর দু’দিন ড্রোন-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরে। আগামীকাল যদি ফের শত্রু ড্রোন হামলা করতে আসে তাহলে শুরুতেই তাদের কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবে সেই প্রশ্নে কার্যত দিশাহীন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ড্রোন নিয়ে দেশটিতে এই আতঙ্ক খুব দ্রুত সমাধান হওয়ার নয়। শত্রু ড্রোনকে সীমান্তে চিহ্নিত করে সেখানেই সেটিকে নিষ্ক্রিয় বা গুলি করে ভূপাতিত করার মতো প্রযুক্তি রপ্ত বা কার্যকর করতে এখনও বেশ সময় লাগবে ভারতের। আর তাই ড্রোনের মাধ্যমেই ড্রোন মোকাবিলা করার পথে হাঁটছে দিল্লি।

গত শনিবার গভীর রাতে জম্মু বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালায় দু’টি বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন। হামলায় ২ সেনা আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির বিমান বাহিনীর প্রযুক্তি বিভাগ সংলগ্ন একটি ভবন।

এরপর ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই কাশ্মিরের জম্মু-পাঠানকোট জাতীয় সড়ক সংলগ্ন কালুচক পুরমণ্ডল রোডে অবস্থিত ভারতীয় সামরিক ঘাঁটির আকাশে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে একটি ড্রোনকে চক্কর দিতে দেখা যায়। মারাত্মক কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই বিষয়টি বুঝতে পেরে টহলরত সেনা সদস্যরা সতর্ক হয়ে যান। ড্রোনটিকে নিষ্ক্রিয় ও ভূপাতিত করতে গুলি চালান তারা। এরপরই অন্ধকারে মিশে যায় ড্রোনটি।

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য চমক যেন আরও অপেক্ষা করছিল। প্রথম ড্রোনটি প্রবেশের দুই ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে ফের একটি ড্রোন সামরিক ঘাঁটির আকাশে প্রবেশ করে। এবারও সেটা শনাক্ত করে ভূপাতিত করতে চালানো হয় গুলি। তবে প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ড্রোনটিও নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ড্রোন দু’টিকে লক্ষ্য করে ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। কিন্তু দু’টি ড্রোনের একটিরও কোনো হদিশ পায়নি সেনাবাহিনী। এরপর সামরিক এলাকা থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি করেও কোনো লাভ হয়নি।

এদিকে ড্রোনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি হামলা শুরু করায় রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, বর্তমানে দেশটির হাতে ড্রোন মোকাবিলায় সেই অর্থে কোনো প্রযুক্তি নেই। নেই অনেক দেশের মতো ‘কিলার ড্রোন’ও।

এছাড়া হামলাকারী ড্রোনগুলোকে সামরিক বাহিনীর রাডারও চিহ্নিত করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে ভরসা হতে পারতেন একমাত্র স্নাইপাররা। বর্তমানে পাঞ্জাব ও কাশ্মির সীমান্তে দিনের বেলা প্রবেশ করা ড্রোনগুলোকে মূলত গুলি করেই মাটিতে নামানো হয়ে থাকে। কিন্ত তারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে থাকা তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর স্নাইপারদের মোতায়েন করা কার্যত অসম্ভব ব্যাপার।

তাই বিপক্ষের ড্রোনগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের ধ্বংস করতে সীমান্ত বরাবর জ্যামার বসানোর সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছে ভারত। তবে প্রায় বছর দুয়েক আগে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও বিদেশি ওই প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আপাতত থমকে আছে সেই কাজ।

আর তাই ব্যয় কমাতে বিদেশি প্রযুক্তির পরিবর্তে দেশীয় জ্যামিং প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশটি। কিন্তু সেই প্রযুক্তি হাতে আসার বিষয়টি বেশ সময়সাপেক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো পরাশক্তি দেশগুলো ড্রোন রুখতে ‘লেজার গানে’র ব্যবহার শুরু করে ইতোমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে। তবে ভারতের হাতে সেই প্রযুক্তি না থাকায় অনুপ্রবেশকারী ড্রোনগুলোকে ড্রোনের মাধ্যমে ধাওয়া করে সেগুলোকে ধ্বংস করার নীতি নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

আর এই কাজে নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত দু’ধরনের ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার একটি হলো- দু’টি ডানা রয়েছে এমন ড্রোন। এই ধরনের ড্রোন কাশ্মিরের মতো উঁচু পাহাড়ি এলাকায় উড়তে সক্ষম। ওই ড্রোনগুলো আকারে বেশ বড় হওয়ায় সেগুলো বিস্ফোরক বহন এবং অনেক উঁচু থেকে সেই বিস্ফোরকের মাধ্যমে নিশানায় নিখুঁত হামলা চালাতেও সক্ষম।

দ্বিতীয়ত, শত্রু ড্রোনের হামলা রুখতে ‘সোয়ার্ম ড্রোনে’র ব্যবহার করার কথাও ভাবছে দেশটি। মূলত এই ড্রোনগুলো শত্রু ড্রোনকে চিহ্নিত করে তাদের সিগন্যাল জ্যাম করে দিয়ে নিচে নামিয়ে আনতে বা নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এটা হামলা চালানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। ওই ড্রোনগুলোর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হলেও এখনও তা সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করেনি মোদি সরকার।

টিএম