দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সরকারী কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা কেসিএনএ-এর বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

তবে নিজেদের প্রতিবেদনে এই ঘটনাকে ‘বিরল’ ও ‘ব্যতিক্রম’ বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি। কারণ, সরকারীভাবে উত্তর কোরিয়া বরাবরই দাবি করে আসছে, দেশে করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী নেই।

বুধবার কেসিএনএ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ উত্তর কোরিয়ার উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও ওয়ার্কার্স পার্টির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন কিম জং উন।

পিয়ংইয়ং-এর সেই বৈঠকে দেশটির ওয়ার্কার্স পার্টির জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পার্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা স্ট্যান্ডিং কমিটির একজন সদস্যও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন ও সরকারী নীতি নির্ধারণ করে থাকে ওয়ার্কার্স পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটি। কিম জং উন নিজেও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির একজন সদস্য।

কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা বলেছেন- দেশ ও জনগণের সামনে এক বিশাল হুমকি উপস্থিত হয়েছে। শীর্ষ নেতা আরও বলেছেন, দেশের সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্যই আজ দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।’

কেসিএনএ-এর প্রতিবেদনে কোথাও করোনা বা কোভিডের উল্লেখ না থাকলেও উত্তর কোরিয়া বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- এই সংবাদ একটি ইঙ্গিতই দিচ্ছে, আর তা হলো উত্তর কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর উপস্থিতি আছে এবং বর্তমানের অর্থনৈতিক ও খাদ্যসংকট পীড়িত এই দেশটির শীর্ষ নেতা এ বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ অ্যান চ্যান ইল ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘কিম জং উনের সাম্প্রতিক এই বৈঠকের অর্থ হলো- দেশটিতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগী আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পিয়ংইয়ং-এর এখন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের মহামারি সামাল দেওয়ার মতো দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই এবং যদি সহযোগিতা সেখানে না পৌঁছায় সেক্ষেত্রে সামনে বিশাল বিপর্যয় অপেক্ষা করছে উত্তর কোরিয়ার সামনে।’

উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলের ইওয়াহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লেইফ এরিক ইসলে বলেন, কেসিএনএ-এর সাম্প্রতিক সংবাদ আসলে উত্তর কোরিয়ার ভঙ্গুর ও ক্ষয়িষ্ণু স্বাস্থ্যসেবা ব্যাবস্থাকেই ইঙ্গিত করেছে।

বিবিসিকে ইসলে বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও হয়তো কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতির জন্য দেশের সরকারী কর্মকর্তাদের বলির পাঁঠা বানাবেন এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলার নামে তাদের বিরুদ্ধে আদর্শগত বিচ্যুতির অভিযোগ তুলবেন।’

‘কিন্তু মূল ব্যাপার হলো- তার সামনে এখন দু’টি পথ খোলা আছে- হয় তিনি দেশের জনগণকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন নয় তো টিকা সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবেন।’

বার বার নিষেধ ও সতর্ক করা সত্ত্বেও পরামণু প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ চীন। তবে গত বছর করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর থেকে নিজেদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকাসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ফলে, গত প্রায় দেড় বছরে চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্য প্রায় তলানিতে ঠেকেছে।

এর মধ্যে গত বছর তাইফুন ও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির কৃষি উৎপাদন। ফলে, সম্প্রতি খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে উত্তর কোরিয়ায়।

কিছু দিন আগে ওয়ার্কার্স পার্টির এক সাধারণ বৈঠকে দলের কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্কবার্তা ও পরস্পরের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কিম জং উন; বলেছেন, চলমান খাদ্য সংকট দেশে ১৯৯০ সালের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মতো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বিবিসিকে ইসলে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার উচিত সীমান্ত পুরোপুরি না হলেও কিছু পরিমানে খুলে দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। কারণ, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা যদ্দুর জানি, দেশটিতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি ওষুধ সংকটও দেখা দিয়েছে। এখনই কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে বিরাট মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে দেশটি।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ