কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তীব্র তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩০ জনে। রাজ্যের প্রধান মর্গের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা লিসা লিপোয়েন্ট মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।

হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা ও তুষারপাতে অভ্যস্ত কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ ও এ জনিত কারণের মৃত্যুর এই সংখ্যাকে ‘নজির বিহীন’ উল্লেখ করে মঙ্গলবারের বিবৃতিতে লিসা লিপোয়েন্ট বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শুরু হওয়া নজির বিহীন তাপপ্রবাহে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এ পর্যন্ত ২৩০ জন মারা গেছেন এবং তাদের মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত তাপপ্রবাহজনিত শারীরিক অসুস্থতা। ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি এর আগে দেখা যায়নি।’

তাপপ্রবাহ না কমলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ ও বলেছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে ঠিক কী কী শারীরিক অসুস্থতার শিকার হয়েছিলেন মৃতরা, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

কানডার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের ভ্যানকুভার, বার্নাবি ও স্যুরিতে গরমজনিত কারণে অসুস্থ ও মৃতের সংখ্যা বেশি।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের ভ্যানকুভার শহরের পুলিশেল দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত গরমের কারণে হিটস্ট্রোকে ভ্যানকুভারে আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনেরও বেশি মানুষের। এছাড়া রাজ্যের বার্নাবি শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কমপক্ষে ৩৪ জন ও স্যুরি এলাকায় ৩৮ জন গরমজনিত হিটস্ট্রোকে আকস্মিক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন।

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে লিসা লিপোয়েন্ট বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক, সদ্যজাত ও ১০ বছরের কম বয়সী শিশু এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক অসুস্থতায় ভোগা মানুষজন।’

কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে মঙ্গলবার। এদিন দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটনে তাপমাত্রা ছিল ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই নিয়ে টানা তৃতীয় দিন দেশটিতে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করলো।

এর আগে গত রোববার দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এক গ্রামের তাপমাত্রা ছিল ৪৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন দেশটির ইতিহাসে এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

বিবিসি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের আগপর্যন্ত কানাডার তাপমাত্রা কখনোই ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়নি। আর টানা ৩ দিন ধরে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

এই পরিস্থিতিতে কিছুটা অসহায় হয়েই একে-অপরের খোঁজ রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কর্পোরাল মাইক কালনজ। তিনি বলেছেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের খোঁজ-খবর রাখুন, পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখুন। এমনকি আপনি যেসব বয়স্ক মানুষকে জানেন, তাদেরও খোঁজ নিন।

পুলিশ সার্জেন্ট স্টিভ অ্যাডিসন বলছেন, ভ্যানকুভারে কখনোই এতোটা গরম পড়েনি। কেবল এই গরমের কারণেই অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটন গ্রামের বাসিন্দা মেগান ফ্যান্ডরিখ ‘গ্লোব অ্যান্ড মেইল’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাদের এলাকার তাপমাত্রা ‘অসহনীয়’ পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশি তাপমাত্রায় অনেকটাই অভ্যস্ত, কিন্তু ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সাথে ৪৭ ডিগ্রির বিস্তর ফারাক।’

কানাডার জলবায়ু দফতর ‘এনভায়রনমেন্ট কানাডা’ দেশের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অ্যালবার্টা, সাসকাচুয়ান, নর্থওয়েস্টার্ন টেরিটোরিস এবং ইউকন রাজ্যের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।

এনভায়রনমেন্ট কানাডা-এর সিনিয়র জলবায়ুবিদ ডেভিড ফিলিপস বলছেন, ‘আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শীতপ্রবণ দেশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বরফ পড়ে, এমন একটি দেশ। এখানে মাঝেমধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বা তুষার ঝড় হয়ে থাকে, কিন্তু এরকম উষ্ণ তাপমাত্রা এখানে প্রায় কখনোই পাওয়া যায় না।’

‘কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ের তাপমাত্রাও কানাডার কয়েকটি এলাকার বর্তমান তাপমাত্রার চেয়ে কম বলে’— মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র: সিএনএন

এসএমডব্লিউ