চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান; তবে তিনি এ ও বলেছেন, কারও কোনো চাপের মুখে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যত্যয় ঘটবে না।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল সিজিটিএনকে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের এই অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছেন ইমরান খান। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষীক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ৭০ বছরের এবং এই দীর্ঘ সময়ে এখন পর্যন্ত এই সম্পর্কে কোনো ফাটল ধরেনি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের চরম তিক্ত সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ইমরান খান বলেন, এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার এ বিষয়ে যে কোনো একটি পক্ষ বেছে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের দেশগুলো পাকিস্তান আহ্বানও জানিয়েছে বলে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সিজিটিএনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ইস্যুতে দেশের ওপর চাপ দেওয়াকে তিনি অনুচিত বলে মনে করেন। ইমরান বলেন, ‘পাকিস্তান মনে করে, চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের দেশগুলো পাকিস্তানকে পক্ষ বেছে নেওয়া জন্য যে চাপ দিচ্ছে, তা অনুচিত।’

‘আমরা কেন পক্ষ নিতে যাব? পাকিস্তান সবার সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভালো সম্পর্ক চায়।্রেচীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমন ঘটাতে পাকিস্তানের ওপর যতই চাপ আসুক না কেন, বাস্তবে এমন কিছু ঘটবে না।’

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাম্প্রতিক বৈরিতা এবং এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের জোট কোয়াড নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যা কিছুই হোক, যত চাপ আসুক, চীন পাকিস্তানের বন্ধুত্ব যেমন ছিল তেমন থাকবে। তবে আমার মনে হয়, যত দিন গড়াচ্ছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব তত গুরুতর হচ্ছে।’

‘চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অতিমাত্রায় সতর্ক। সম্প্রতি তারা যেভাবে পরস্পরের মুখোমুখী হচ্ছে দিন-দিন তা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারতকে সঙ্গী করে যুক্তরাষ্ট্র কোয়াড নামে যে জোট গঠন করেছে, ভবিষ্যতে এই আঞ্চলিক জোটটি কোন ভূমিকা নেবে- তা নিয়ে দুশ্চিতার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।’

চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক মিত্রতা রয়েছে। এ সম্পর্ক শুধু আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বন্ধুত্বে বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠবে।

তিনি আরও জানান, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কউন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো দ্বিপাক্ষীক বাণিজ্য এবং  চীন ও পাকিস্তানের সংযোগকারী বাণিজ্যিক স্থলপথ চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপিইসি) কাজ শেষ হলে এটি পাকিস্তানের জন্য বড় একটি অর্জন হবে।

সিপিইসি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। চীনের ভবন ও সড়ক নির্মাণকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এই প্রকল্পটির কাজ তদারক করছে। সিপিইসি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলে পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের গোয়াদর স্থলবন্দরেরর সঙ্গে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সরাসারি সড়ক যোগাযোগ সম্ভব হবে।

গত ৭০ বছর ধরে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক যেকোনো সংকট, এমনকি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সময়ও চীন পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে সব সময় পাকিস্তানের পাশে ছিল বলে সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন ইমরান খান।

এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘ভাল সময়ে সবাই আপনার পাশ থাকবে, কিন্তু প্রকৃত বন্ধু তারাই, যারা খারাপ সময় এলেও আপনাকে ছেড়ে যাবে না। ৭০ বছর ধরে চীন পাকিস্তানের পাশে থেকে তার প্রমাণ দিয়েছে, আর এ কারণেই পাকিস্তানের জনগণ চীনের জনগণের প্রতি সময়ই ভালবাসা অনুভব করে।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএমডব্লিউ