চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট আট দফায় অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এরপর দুই মাস যেতে না যেতেই  রাজ্যটিতে ফের শুরু হয়েছে ভোটের উত্তাপ।

অবশ্য এটা নিয়মিত কোনো নির্বাচন নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার দু’টি আসনের ভোটগ্রহণ এবং বিধানসভার ফাঁকা আসনগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার এই ফাঁকা আসনগুলোর উপনির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজনের পক্ষে ছিল। ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও অবশেষে সেটা কেটে গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাজ্যসভা ও বিধানসভার ফাঁকা আসনগুলোতে উপনির্বাচন আয়োজনে রাজ্য প্রশাসন নির্বাচন কমিশনকে সবরকম সহযোগিতা করতে তৈরি বলেও মমতা সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই উপনির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সবুজ সংকেত পেয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে। এছাড়া প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে আরও দু’টি আসনে ভোটগ্রহণই হয়নি। সবমিলিয়ে মোট সাতটি আসনে ফের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে।

এদিকে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তীরাথ সিং রাওয়াত। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যেই শুক্রবার (২ জুলাই) রাতে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। আর এতে করে অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কারণ তীরাথ এবং মমতা— দু’জনে উত্তরাখণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হলেও বিধানসভা ভোটে জিতে আসেননি। চলতি বছরের মার্চে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে লোকসভার সাংসদ ছিলেন তীরাথ। আর রাজ্যে দলকে জিতিয়েও মমতা নিজে নন্দীগ্রামে হেরেছেন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।

ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভায় জিতে না-এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলে, উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। কিন্তু চলমান ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে’ ভারতে এই মুহূর্তে কোনো নির্বাচন বা উপনির্বাচন আয়োজনে ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ দেশটির নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সুযোগে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তীরাথকে সরিয়ে পরোক্ষভাবে মমতার উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি।

আর এ কারণেই চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই যত শিগগির সম্ভব রাজ্যের উপনির্বাচনগুলো সম্পন্ন করার পক্ষে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কয়েকদিন আগেই রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশনকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়।

রাজ্য প্রশাসনের মতে, করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফলে পাঁচ আসনে উপনির্বাচন এবং দুই আসনে নির্বাচনের জন্য এটাই আদর্শ সময়। কারণ এরপরে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সত্যিই সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে নির্বাচনের আয়োজন করা কঠিন হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আট দফায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ২১৩টি আসনে। বিজেপি জয় পেয়েছে ৭৭টিতে।

এরপর গত মে মাসের শুরুতেই তৃতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী- মমতাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে। সেই হিসেবে বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য হতে মমতার হাতে সময় আছে আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত।

টিএম