গত এক সপ্তাহ ধরে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যেই এবার দাবানল দেখা দিয়েছে কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়। রাজ্যের ফায়ার সার্ভিস দফতরের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, আকস্মিক বজ্রপাতই এই দাবানলের কারণ।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রাজ্য প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের অন্তত ১৩৬ টি এলাকা দাবানলের প্রকোপে পড়েছে।

শুক্রবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ফায়ার সার্ভিস দফতরের দাবানল বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় আকস্মিক বজ্রপাতের ফলে রাজ্যের লিটন শহরে প্রথম দাবানলের সূত্রপাত হয়। টানা তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

রাজ্যের ফায়ার সার্ভিস দফতরের প্রধান নির্বাহী ক্লিফ চ্যাপম্যান বলেন, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১২০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে এবং এর ফলে রাজ্যের ১৩৬ টি এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ বজ্রপাত হয়েছে জনবসতির কাছাকাছি এলাকাসমূহে। উপদ্রুত লোকজনকে দ্রুত বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের সহযোগিতা করছেন।’

প্রথম যেখানে দাবানল দেখা গিয়েছিল, সেই লিটন শহরের মেয়র পোল্ডারম্যান জানান, এত আকস্মিকভাবে এই দুর্যোগ এসেছে যে প্রথম পর্যায়ে শহরের কেউই সেটি ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি।

বিবিসিকে পোল্ডারম্যান বলেন, ‘মাত্র ১৫ মিনিট; এর মধ্যেই আমরা দেখলাম পুরো শহরজুড়ে কেবল আগুন আর অগ্নিশিখা।’

কানাডার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হরজিত সজ্জন ঘোষণা করেছেন, দাবানল কবলিত এলাকাসমূহের লোকজনকে নিরপদ স্থানে সরিয়ে আনা এবং তাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা উপকরণ সরবরাহে সহযোগিতা করতে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার কানাডার জন নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিল ব্লেইর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সপ্তাহজুড়ে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে আকস্মিক এই দাবানল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আমরা একটি দীর্ঘ এবং কঠিন গ্রীষ্মকাল পার করছি।’

গত ২৬ জুন থেকে কানাডায় শুরু হয়েছে অসহনীয় তাপপ্রবাহ। চলমান এই তাপপ্রবাহে শীতল জলহাওয়ার এই দেশটির কোনো কোনো এলাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে; বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে ৪০-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

দেশটির স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, চলমান এই তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় ইতোমধ্যে ৭১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই সংখ্যাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

কানাডার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর এনভায়র্নমেন্ট কানাডার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দু’দিন দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে কিছুটা হ্রাস পেলেও সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রার বিশেষ তারতম্য হয়নি।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ