চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে দেশটির সরকারের ব্যাখ্যায় আস্থা রাখছে পাকিস্তান। শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

সম্প্রতি শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। এই উপলক্ষ্যে শুক্রবার দেশটির ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাক্ষাৎকার নিতে ইসলামাবাদে হাজির চীনের কয়েকজন সাংবাদিক।

সাক্ষাৎকারে তারা উইঘুর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান জানতে চাইলে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যম ও দেশসমূহের সরকার এই ইস্যুটিকে যেভাবে বিশ্বের সামনে হাজির করছে, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

‘চীনের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুবই দৃঢ় এবং যেহেতু এই সম্পর্কের মূল ভিত্তি আস্থা, তাই উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে আমরা চীনের বক্তব্যে আস্থা রাখছি। জিনজিয়াং-এ তাদের তৎপরতা ও কর্মসূচি নিয়ে চীন যা বলবে, আমরা তা ই গ্রহণ করব।’

২০১৭ সালে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে অভিযান চালায় চীনের সেনাবাহিনী। চীনের এই প্রদেশটিতে দেশটির মূল জাতিগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ধর্মীয়, জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাস। চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদেরও অধিকাংশই বাস করেন জিনজিয়াং প্রদেশে।

জিনজিয়াং-এ অভিযানের পর সেখানকার উইঘুর মুসলিমদের বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমসমূহে। তবে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার এই তথ্যকে তখন ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে বলেছিল- পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো যাকে বন্দিশিবির বলছে, সেটি আসলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে চীনের সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল, জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থা থেকে উইঘুর মুসলিমদের দূরে রাখতে উইঘুর মুসলিমদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

তারপর চলতি বছর মার্চে জিনজিয়াং-এ উইঘুর বসতি বিষয়ক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেখানে বলা হয়, উইঘুরদের জাতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং। আশ্রয়শিবিরের উইঘুরদের নিয়মিতভাবে হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে, পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করা হচ্ছে উইঘুর নারীদের।

বিবিসির এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই চীনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশে। চীন যদিও বিবিসির প্রতিবেদনকে ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করে এসেছে, কিন্তু তাতে সমালোচনা থামেনি।

এর মধ্যেই উইঘুর মুসলিম ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করল পাকিস্তান। অবশ্য কয়েকদিন আগে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল সিজিটিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেছিলেন, চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্ব ৭০ বছরের কোনো চাপের মুখে এই সম্পর্কে ফাটল ধরবে না।

সাক্ষাৎকারে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) এর শততম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিপিসিকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন ইমরান। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বরাবরই জেনে এসেছি জনগণ, সমাজ ও দেশের প্রকৃত উন্নয়নে পশ্চিমা গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। এই ধারণা যে পুরোপুরি সঠিক নয়, গত ১০০ বছরে তার প্রমাণ রেখেছে সিপিসি। পশ্চিমা গণতন্ত্রের বিপরীতে গিয়ে একটি পাল্টা এবং সফল ব্যবস্থা দাঁড় করানো প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার এবং এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে সিপিসি।’

সূত্র: আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট

এসএমডব্লিউ