সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রশ্নে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির অবস্থান বরাবরই একেবারে বিপরীত। এছাড়া ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এই ইস্যুতে কম জলঘোলা হয়নি। তবে এবার বিতর্কিত এই আইন কার্যকরে ঘোর বিরোধী মমতার সহায়তা চাইলেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

তৃণমূল কংগ্রেস মনে করে, ভারতে বসবাসকারী ভোটদাতা, করদাতা, সম্পত্তির মালিক এবং তাদের পরিবারের সদস্য সবাই দেশের নাগরিক। তাই পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে তাদের বিরোধ নির্বাচনী প্রচারেও গুরুত্ব পেয়েছে।

এই অবস্থায় শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি মন্তব্য বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজ্যের অশোকনগরে শুক্রবার দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া রাজ্যে সিএএ দ্রুত কার্যকর করা যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের আইন কার্যকর করা কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপরে নির্ভর করে? দিলীপের জবাব, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’

দিলীপ এদিন অশোকনগরে দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে সিএএ রাজ্যে তাড়াতাড়ি কার্যকর হয়ে যাবে। না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের যখন সুবিধা হবে, লকডাউন কেটে যাবে, তখন কার্যকর করা যাবে।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, সিএএ চালু করার ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে বড় বিরোধিতা হতে পারে, আঁচ করেই দিলীপ ঘোষের মতো বিজেপি নেতা কিছুটা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ অবস্থান থেকে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। যাতে, মতুয়া পাড়ায় গিয়ে নাগরিকত্ব বিধি জারির ইচ্ছা প্রকাশ করা যায়। আবার তা না করতে পারার একটি অজুহাতও দিয়ে রাখা যায়।

কারণ, সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে এসে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, বিধানসভা নির্বাচন এবং করোনার টিকাদানের কাজ শেষ হলে সিএএ মেনে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

এদিকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি ও পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য শুক্রবার ফের বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার প্রয়োজন নেই। আমরা তা করতে দেব না। আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে। আমরা ভোট দিই। আমরা সকলেই নাগরিক। তাই নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রশ্ন নেই।’

তার ভাষায়, ‘দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক পরিপক্কতা নেই। তার উচিত সিএএ, এনপিআর, এনআরসি নিয়ে ভালো করে পড়াশোনা করা!’

টিএম