স্পেনে গত সপ্তাহে কোভিড সংক্রমণ হার বেড়েছে তিন গুণ। গোটা ইউরোপেই সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। ​এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা স্পেনের। চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শুধু স্পেন নয় পুরো ইউরোপ এখন উদ্বিগ্ন।

অথচ গত দুই মাসে একেবারেই কমে গিয়েছিল করোনার প্রকোপ। এতে করোনাবিধি শিথিল করা হয় বহু দেশে। মাস্ক, দূরত্ববিধি— এ জাতীয় সব নিয়ম মানাটা ছেড়ে দেওয়া হয় মানুষের ইচ্ছার ওপর। পর্যটন আর ভ্রমণেও দেওয়া হয় ছাড়পত্র। কিন্তু উদ্বেগ ফের বাড়ছে। ​

এর মধ্যে ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন, ইউরোসহ একাধিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়। এ নিয়ে বারবার সাবধান করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ প্রধান হান্স ক্লুগ জানিয়েছিলেন, মারাত্মক ঝুঁকি নিচ্ছে দেশগুলো। টুর্নামেন্টগুলো ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ফলে যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। স্পেনের ​জুলিয়ো মিরান্ডা বলছেন, আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। এখনো দ্বিতীয় ডোজটি নেওয়া হয়নি তার। অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে নির্দিষ্ট সময় আসবে। তবে স্পেনে টিকার সংকট নেই, এটাই যা ভরসার বিষয়।
 
মিরান্ডা জানান, গত মাসে তার এক সহকর্মী ও তার স্ত্রী আক্রান্ত হন। তার পাচ সহকর্মী শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার পরে এক দিন পেটে ব্যথা শুরু হয় নিজের। সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। মিরান্ডা বলেন, ‘একমাত্র নিজের হলেই মানুষ বুঝতে পারবে, করোনা কতটা ভয়ঙ্কর।’

গত এক সপ্তাহ আইসিইউয়ে ছিলেন মিরান্ডা। এখনও হাসপাতালে। জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু যান্ত্রিক নলে অক্সিজেন চলছে। বার্সেলোনার এক হাসপাতালের ব্যবস্থাপকের বক্তব্য, ‘কিছু দিনের জন্য দম ফেলার সময় পেয়েছিলাম। এখন আবারও রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে।’ 

নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার কারণ— ডেল্টা স্ট্রেন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অতিসংক্রামক ধরনটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। এ দফায় বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন অল্পবয়সীরা। যাদের টিকাকরণ হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে অনেককেই। ফলে রোগীর চাপ বাড়ছে।

চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, করোনার নতুন এই ধরনে অল্পবয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীদের শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছে। স্টেরয়েডে কাজ দিচ্ছে। বেশির ভাগই আসছেন নিউমোনিয়া নিয়ে। কিন্তু হাসপাতাল রোগীর চাপ বেশি।

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতিও ভাল না। ব্রিটেনেও ডেল্টার প্রকোপে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। রাশিয়া থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টার পাশাপাশি সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। 

লন্ডন ও সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ইউরোর ম্যাচ দেখে ফেরার পর বহু দর্শকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। স্কটল্যান্ডের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ম্যাচ দেখে লন্ডনফেরত অন্তত ১২৯৪ জনের সংক্রমণ ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে দিনে দিনে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।

উয়েফা সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ৬০ হাজার দর্শককে স্টেডিয়ামে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে। জার্মান মন্ত্রীর ক্ষোভ, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ করছে তারা। যেভাবে দর্শকরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন, উল্লাস করছেন, তাতে ভয়ানক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে ভাইরাস।’

এএস