করোনা মহামারির শুরুতে কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন পেশায় দিনমজুর আইজ্যাক মুণ্ডা

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। দিনমজুর থেকে বেসরকারি বড় বড় অফিসে কাজ করা উচ্চ শিক্ষিত কর্মকর্তা, কাউকেই আলাদা করে দেখেনি এই মহামারি। দিনমজুর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী, চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই। আবার চাকরি থাকলেও অনেকেরই কমেছে উপার্জন।

এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে ভুক্তভোগী অনেকেই বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ ফল বিক্রি করা শুরু করেছেন, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছেন, আবার কেউ হয়তো নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে বাড়িতেই কিছু কাজ করছেন।

তবে করোনায় কাজ হারিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে ইউটিউবার হওয়ার এবং সেখানে লাখ লাখ টাকা উপার্জনের ঘটনাটি মনে হয় একটু ব্যতিক্রম। তবে এই ব্যতিক্রম ঘটনাটিই ঘটেছে ভারতের উড়িষ্যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পেশায় দিনমজুর আইজ্যাক মুণ্ডা করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে হয়ে পড়েন দিশেহারা। তাই জীবন চালাতে ফল বিক্রি করা বা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করার বাইরে গিয়ে একটু ভিন্ন ধারায় ভেবেছিলেন তিনি। তাই দিনমজুরি করে দিন চালানো আইজ্যাক আজ লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ আইজ্যাকের বাড়ি ভারতের উড়িষ্যায়। রাজ্যটির সম্বলপুর জেলার বাবুপালিতে বসবাস করেন তিনি। স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিনমজুরি করে কোনোরকমে দিন কাটাতেন আইজ্যাক। নামমাত্র উপার্জনে বেশিরভাগ দিন শুধু ভাত খেয়েই কাটাতে হতো তাদের।

কিন্তু এ সবই অতিমারির প্রভাব পড়ার আগের কথা। অন্যরা যেখানে করোনায় কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, আইজ্যাক উল্টে নিজেকে অন্য ভাবে আবিষ্কার করেছেন। দিনমজুরি ছেড়ে এখন তিনি জনপ্রিয় ইউটিউবার।

মারাত্মক পরিশ্রমের পর দিনের শেষে সামান্য টাকা হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরা আইজ্যাক আজ বাড়িতে বসেই লাখপতি! নিজের ইউটিউব চ্যানেল খোলার পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই তার অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ!

সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন আইজ্যাক। তারপর গরিব পরিবারে যা হয় তার জীবনও সে পথেই এগোচ্ছিল। বাধ্য হয়ে স্কুল ছেড়ে উপার্জনের জন্য দিনমজুরি শুরু করা। সারা দিন কাজ আর কাজ শেষে বাড়ি ফেরা। এর বাইরে নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবার অবকাশ তার ছিল না। বা বলা ভালো হয়তো কখনও ভাবার কথা মনেও হয়নি তার।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর সারা বিশ্বের মতো ভারতেও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিলে কাজ হারান আইজ্যাক। তারপর দীর্ঘসময় বাড়িতেই বেকার হয়ে বসেছিলেন। কখনও কোনো কাজের ডাক পেলে যেতেন।

এ রকমই এক দিন এক বন্ধুর ফোনে তিনি ইউটিউব-এ ব্লগিং করতে দেখেন। বিষয়টি তার বেশ ভাল লাগে। হাজার তিনেক টাকা ধার করে একটি স্মার্টফোন কিনে বন্ধুর সাহায্যে তিনি নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলেন।

মাটির বাড়ি। প্লেটের এক পাশে পড়ে থাকা ভাত অত্যন্ত কম পরিমাণ সবজি দিয়ে মেখে খাওয়া তো কখনও তালপাতা দিয়ে মাদুর বানানো। নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের চিত্রই আইজ্যাক মুণ্ডা তুলে ধরতে শুরু করলেন ইউটিউবে।

ইউটিউবে আইজ্যাকের আপলোড করা প্রথম ভিডিও ছিল ভাত খাওয়ার দৃশ্য। স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে মেঝেতে বসে একসঙ্গে খাচ্ছিলেন তিনি। সেই ভিডিওই ইউটিউবে আপলোড করেন তিনি।

প্রথম ভিডিও আপলোড করার তিন মাসের মধ্যে পাঁচ লাখ মানুষ সেটা দেখেন। শুধু ওই একটি ভিডিও থেকেই ৩৭ হাজার টাকা আয় করেন আইজ্যাক মুণ্ডা। এরপর একে একে আরও ভিডিও করতে শুরু করেন আইজ্যাক। ৩৫ বছরের দিনমজুর আইজ্যাক এখন পেশাদার ইউটিউবার। তার চ্যানেলের নাম ‘আইজ্যাক মুণ্ডা ইটিং’।

নিজের গ্রামের সংস্কৃতি, জীবনযাপন উঠে আসে আইজ্যাকের ভিডিওতে। তার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা সাত লাখ ৫২ হাজার ছুঁয়েছে।

টিএম