আদালত অবমানার অভিযোগে কারান্তরীণ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সমর্থকদের চলমান বিক্ষোভে দেশটির আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে এ পর্যন্ত ১০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন আরও ৪৯০ জন।

সোমবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের পদে থাকা জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে দেশটির আদালতে দুর্নীতির মামলা চলছে। মামলার নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৯ জুন তাকে তলব করেছিল আদালত, কিন্তু সেদিন আদালতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন জুমা।

ফলে, স্বাভাবিকভাবেই তিনি আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং আদালত তাকে এর দায়ে ১৫ মাসের কারাবাসের সাজা ঘোষণাসহ অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।

এ বিষয়ে আদালতের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই গত ৭ জুলাই আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান জ্যাকব জুমা।

এদিকে, জ্যাকব জুমাকে কারাগারে নেওয়ার দিন থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় দক্ষিণআফ্রিকার কাওয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে, যেখানে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৭ দিনের বিক্ষোভে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ব্যাপকমাত্রায় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে দেশটির বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গে।

তারা আরও জানান, সাধারণ মুদি ও খুচরা দোকান থেকে শুরু করে মার্কেট-সুপারমার্কেট ও শপিংমলগুলোতেও হামলা চালিয়েছে লুটপাটকারীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, ‘খাবার, পোষাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র- সামনে যা পেয়েছে সব লুটপাট করেছে তারা।’

বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে ইতোমধ্যে দেশের সামরিক বাহিনীকেও নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবারের ভাষণে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ‘যে কোনো ইস্যুতে জনবিক্ষোভ হতেই পারে, কিন্তু এখানে বিক্ষোভের নামে এক প্রকার সুবিধাবাদী অপরাধচর্চা হচ্ছে। জনগণকে উত্তেজিত করে অচলাবস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাট ও চুরি-ডাকাতি চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রে এই বিক্ষোভ একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি অধ্যায়। এর আগে দেশের কোনো আন্দোলন-বিক্ষোভে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়নি।’

সিরিল রামাফোসা

সোমবারের ভাষণে তিনি স্বীকার করেন, দেশে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও মহামারিজনিত কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতা অনেকের মধ্যেই এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

‘দেশে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অসাম্য দিন কে দিন বাড়ছে। এই সমস্যাসমূহ মোকাবেলা না করে দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তিস্থাপন সম্ভব নয়।’

তবে দেশের বিদ্যামান সমস্যাসমূহের সমাধান কখনও লুটপাট বা চুরি-ডাকাতি নয় উল্লেখ করেন রামাফোসা। পাশাপাশি, বিক্ষোভ প্রতিহত করতে জনগণকে এক হওয়ার আহ্বান তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার আর্থিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনমান বৃদ্ধির উপায় একটিই- সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। লুটপাট বা কোনো প্রকার অপরাধমূলক কার্যক্রম এর সমাধান নয়।’

‘দক্ষিণ আফ্রিকার শান্তিকামী সাধরণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের অবশ্যই আমরা প্রতিহত করব। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ও শান্তিকামী জনগণ সবসময় গণতন্ত্র, শান্তি ও আইনের শাসনের পক্ষে।’

সূত্র : এপি

এসএমডব্লিউ