ভাইরাসের উৎস নির্ধারণ নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের তদন্তে চীনের সহায়তা চান ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস

করোনাভাইরাসের উৎস নির্ধারণে আরও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ভাইরাসের উৎস নির্ধারণ নিয়ে ডব্লিউএইচও’র দ্বিতীয় ধাপের তদন্তে সহায়তা চেয়ে দেশটির প্রতি এই আহ্বান জানান সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।

এছাড়া তদন্ত কাজে আরও স্বচ্ছতা ও চীনের বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষজ্ঞদের আরও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতেও বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গেব্রেইয়েসুস। করোনাভাইরাসের উৎস নির্ধারণ নিয়ে ডব্লিউএইচও’র প্রথম ধাপের তদন্ত শেষ হয় গত ফেব্রুয়ারিতে।

প্রথম ধাপের তদন্ত শেষে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল যে, চীনের উহান শহরের একটি গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ‘একেবারেই অসম্ভব’ এবং এটা সম্ভবত বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে থাকতে পারে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।

দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, করোনা মহামারির শুরুর ঠিক আগের এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমদিকে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারে তথ্য দরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। প্রথম দফার তদন্তের সময় চীন এই তথ্য তার সংস্থাকে দেয়নি বলেও জানান তিনি।

এছাড়া চীনের উহানে অবস্থিত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (ডব্লিউআইভি)-র বিষয়েও পরিষ্কার তথ্য দরকার বলেও জানান ডব্লিউএইচও’র প্রধান। নিজেকে একজন মেডিকেল প্রফেশনাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি কখনও কখনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

এর আগে মার্কিন সরকারের এক রিপোর্টে বলা হয়, চীনের উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। গত জুন মাসের শুরুতে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছিল।

মার্কিন সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই এ বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

সোমবারের প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ২০২০ সালের মে মাসে করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে গবেষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি। মূলত কোভিড-১৯ এর জিনোমিক অ্যানালাইসিসের ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট দেয় তারা।

মার্কিন গোয়েন্দারা অবশ্য বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, দুর্ঘটনাবশত চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (ডব্লিউআইভি) থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাদুড়ের শরীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে থাকতে পারে।

এছাড়া আরেকটি প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছিল, চীন করোনা মহামারির তথ্য প্রকাশ করার আগেই ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশটির উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) তিন গবেষক হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রকাশিত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যও উল্লেখ করে পত্রিকাটি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে ‘‘চীনা ভাইরাস’’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

যদিও, চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, করোনাভাইরাসের উত্‍‌স নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গা নয়। একাধিক উত্‍‌স থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম