পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং স্পিন বোলডাক সীমান্ত তালেবান মুক্ত করার এক অভিযানে আফগান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার কান্দাহারের এই শহরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও তালেবান জঙ্গিদের রাতভর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী। তালেবানের জঙ্গিরা দেশটির উত্তরাঞ্চল শক্ত নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর অন্য প্রান্তেও শক্তিশালী ঘাঁটি গড়তে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।

আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন এই উত্থানে পাকিস্তানের সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। স্পিন বোলডাক থেকে এএফপির প্রতিনিধি বলেছেন, শুক্রবার রাতভর প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর তালেবানের কয়েক ডজন আহত যোদ্ধাকে সীমান্তের কাছে অবস্থিত পাকিস্তানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সীমান্ত থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের কাছের চামান থেকে তালেবানের বিদ্রাহী হিসেবে পরিচয় দেওয়া মোল্লা মুহাম্মদ হাসান বলেছেন, আমাদের একজন যোদ্ধা নিহত ও কয়েকডজন আহত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের শক্তিশালী তালেবানবিরোধী শত্রু ঘাঁটি আব্দুল রশিদ দোস্তুমের কাছাকাছি তালেবান জঙ্গিরা চলে আসায় রাতে সীমান্তের ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুদ্ধবাজ আব্দুল রশিদ দোস্তুমের মিলিশিয়া বাহিনী যোজান প্রদেশের রাজধানী শেবারগান ছেড়ে পালিয়েছে।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, তালেবানের যোদ্ধারা শহরের প্রবেশ দ্বারের দখল নিয়েছেন। দোস্তুমের মিলিশিয়ারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে। তারা শহরের বিমানবন্দর অভিমুখে পালিয়ে গেছে।

আফগানিস্তানের তালেবানবিরোধী হিসেবে পরিচিত আব্দুল রশিদ দোস্তুম নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়া বাহিনী। এই বাহিনীকে যুদ্ধবাজ হিসেবে মনে করে তালেবান। যোজান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর তালেবান যোদ্ধারা প্রাদেশিক রাজধানীর প্রবেশদ্বারে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তালেবান জঙ্গিদের হটাতে অভিযান শুরু করেছে আফগান সরকারি বাহিনী।

গত কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দোস্তুম। ১৯৯০ এর দশকে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিল এই মিলিশিয়া গোষ্ঠী। তবে দোস্তুম বাহিনী তালেবানের হাজার হাজার কারাবন্দিকে হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ আছে।

দেশের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সামরিক বাহিনীকে তালেবানবিরোধী যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে বলে যে আশা দেখা যাচ্ছে; দোস্তুম মিলিশিয়াদের পথ হারানো বা পশ্চাদপসরণ ঘটলে তা কাবুল সরকারকে হতাশই করবে। দেশজুড়ে যখন যুদ্ধ বৃদ্ধি পেয়েছে তখন কাবুল এবং ইসলামাবাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই চলছে। আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিছু কিছু এলাকায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তালেবানের জঙ্গিদের বিমান সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।

তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তার সেনাবাহিনী এবং জনগণের সুরক্ষার জন্য নিজ অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে আমরা স্বীকার করছি, নিজ ভূখণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার আফগান সরকারেরও আছে।

বুধবার তালেবানের দখলে যাওয়া স্পিন বোলডাকের বাসিন্দারা বলেছেন, সীমান্ত শহরটির প্রধান বাজারে সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীরা লড়াই করছে। এই এলাকায় তুমুল সংঘর্ষ চলছে।

সীমান্তের এই ক্রসিংয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে সরাসরি প্রবেশ করা যায়; যেখানে তালেবানের শীর্ষ যোদ্ধারা গত কয়েক দশক ধরে ঘাঁটি গড়েছে। চলমান লড়াইয়ের মাঝেই বৃহস্পতিবার পাকিস্তান চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য তালেবানবিষয়ক বিশেষ সম্মেলন বাতিল করেছে পাকিস্তান। 
 
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সৈন্যরা দুই দশকের বেশি সময় ধরে অবস্থানের পর কোনও ধরনের সমাপ্তি ছাড়া আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৯০ শতাংশ সদস্য আফগানিস্তান ছেড়েছে। এরপরই আফগানিস্তানে তালেবানের আগ্রাসন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দখলে নিয়েছে দেশটির বেশিরভাগ জেলা।
 
এসএস