দাঙ্গা বাঁধিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা

দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান দাঙ্গা-লুটপাট ও সহিংসতাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। এটাকে গণতন্ত্রের ওপর হামলা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ, সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে। দুর্নীতি ও আদালত অবমানার অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কার্যত সহিংসতা ও দাঙ্গায় রূপ নেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলছে, দাঙ্গা ও সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকেই নিহতের এই সংখ্যা ১০০-র বেশি। এছাড়া খাবার ও নিত্যপণ্য লুটতরাজের ঘটনার পর দোকান ও সুপার মার্কেটগুলোতে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির পুলিশ।

দেশটির কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের একজন মেয়র জানিয়েছেন, ‘দাঙ্গা ও সহিংসতা শুরুর পর থেকে কোয়াজুলু-নাটালে কমপক্ষে ৮০০টি দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে। লুটপাট হওয়া পণ্যের আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।’

কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনায় মানুষকে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল। অপরাধীরা দাঙ্গা সৃষ্টির পরিকল্পনা করার পাশাপাশি লুটপাটে সহায়তাও করেছিল।

কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশটি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নিজের এলাকা এবং তাকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর সেখানেই প্রথম বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়েছিল।

রামাফোসা বলেন, দাঙ্গা বাঁধিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সহিংসতায় উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এর বেশি আর কিছু খোলসা করেননি তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপরাধীদের পেছনে ছুটছি।’

জ্যাকব জুমা ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘুষসহ দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন তিনি ও তার সরকার।  দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অবশ্য ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল- দেশের বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটির সামনে তাকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জুমা সেখানে হাজির হননি। এরপরেই তার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় ঘোষণা করে আদালত।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জ্যাকব জুমা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার প্রশাসনের লোকেরা যখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করছিল, তখন তিনি চোখ বুঁজে ছিলেন।

টিএম