হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি

নভেল করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে চীনে দ্বিতীয় বারের মতো প্রতিনিধি দল পাঠানোর যে প্রস্তাব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করেছিল- তাতে চীনের সরকারের আপত্তিকে ‘দায়িত্বহীন’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এ বিষয়ে তাদের (চীনের সরকার) অবস্থান পুরোপুরি দায়িত্বহীন ও বিপজ্জনক….তাদের মনে রাখা উচিত, বিশ্বে প্রতিদিন করোনার প্রকোপ বাড়ছে এবং এখন মহাপ্রাচীর গড়ে নিজেদের আলাদা রাখার সময় নয়।’

প্রাণঘাতী ভাইরাস সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় চীনে প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।

গত ১৬ জুলাই এ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘করোনার উৎস অনুসন্ধান বিষয়ক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।’

‘চীনে দ্বিতীয় দফায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রয়োজন বোধ করছে ডব্লিউএইচও। এ দফায় চীনের উহান শহরসহ যেসব অঞ্চলে জীবাণু গবেষণা সংক্রান্ত ল্যাবরেটরিসমূহ আছে, সেগুলো পরিদর্শন করা হবে।’

চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল উহানে।

উহানের সি ফুড মার্কেটে গৃহপালিত ও সামুদ্রিক প্রাণী ছাড়াও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি হতো। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্য প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রথম সংক্রমিত হয় সার্স-কোভ-২ বা ভাইরাস, যা পরে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, উহানে প্রথম যে ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, সি ফুড মার্কেটে তার নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ অবশ্য চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য বাতিল করে দিয়ে বলেছে, উহানের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে এই ভাইরাসটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং সেই গবেষণাগারের কর্মচারীদের অসতর্কতার ফলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা মহামারির শুরু বিষয়ক এই তত্ত্ব আন্তর্জাতিকভাবে ‘ল্যাব তত্ত্ব’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

চীন অবশ্য এই তত্ত্বকে শুরুতেই বাতিল করে দিয়ে বলেছে, করোনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার অভিপ্রায় থেকে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে।

তবে ১৬ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘করোনার উৎস সম্পর্কে বর্তমানে যেসব তত্ত্ব প্রচলিত আছে, সেসবের কোনোটিকেই এই মুহূর্তে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে, গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে- এই ধারণাটি বাতিল করার সময় এখনও আসেনি।’

এদিকে, ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক এই প্রস্তাব দেওয়ার ৫ দিন পর ২১ জুলাই তাতে আপত্তি জানিয়েছে চীনের সরকার। ওই দিন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের (এনএইচসি) উপমন্ত্রী জেং ইক্সিন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এমন কোনো অনুসন্ধান পরিকল্পনাকে সমর্থন করেতে পারি না যা মানবিক কাণ্ডজ্ঞানের জন্য অসম্মানজনক ও বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে।’

চীনের গবেষণাগারে এই ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছিল এবং কর্মীদের অসাবধানতার কারণে এটি বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে- পশ্চিমা বিশ্বের প্রচার করা এই ‘গুজবে’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আস্থা রেখেছে- এমন তথ্য জানার পর ‘হতাশা’ বোধ করছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে চীনের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আশা করব করোনাভাইরাস সম্পর্কে চীনের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শসমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে এই ভাইরাসের উৎস সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বৈজ্ঞানিক বিষয় হিসেবে দেখবে।’

চীনের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এর প্রতিক্রিয়া জানাল হোয়াইট হাউস।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ