করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে তা সত্ত্বেও দেশটির সরকার জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে মালয়েশিয়ায় লকডাউন ও জরুরি অবস্থা শিথিল করা হবে।

সোমবার মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির আইনমন্ত্রী তাকিউদ্দিন হাসান। তিনি বলেন, ৩১ জুলাইয়ের পর লকডাউন ও জরুরি পরিস্থিতির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।

গত জুন মাসের শেষ দিক থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১ জুলাই থেকে মালয়েশিয়ায় মাসব্যাপী লকডাউন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশটির সরকার; যার মেয়াদ ৩১ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে।

কিন্তু লকডাউন ও জরুরি অবস্থা জারি থাকা সত্ত্বেও সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ এসেছে— এমন বলার উপায় নেই। মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৮ জনে এবং বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০৩ জন।

এর মধ্যে রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৫ জন; যা মহামারি শুরুর পর থেকে মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ কোভিড শনাক্তের রেকর্ড। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আক্রান্তের হারে বর্তমানে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে আছে দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে লকডাউন ও জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কেন তা হলো না সেজন্য সম্ভাব্য দু’টি কারণকে দায়ী বলে মনে করছেন মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রথম কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, দীর্ঘ একমাসের লকডাউনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় দেশের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মালয়েশিয়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে। লকডাউন ও জরুরি অবস্থার মেয়াদ আবার বৃদ্ধি করা হলে এই ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং সরকার এ বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

দ্বিতীয়ত, মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতা। ২০২০ সালের মার্চে পার্লামেন্টে একদমই অল্প ভোটের ব্যবধানে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।

জোটের অন্যতম শরিক ও মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউএমএনও পার্টি চলতি মাসের শুরুর দিকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে দেশটির সরকারে।

মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের আয়োজন করতে হবে। যদি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সেই ভোটে জিততে পারেন, তবেই তিনি এবং তার মন্ত্রিসভার সব সদস্য সুরক্ষিত থাকবেন।

দেশটির পার্লামেন্টে শুরু হওয়া বিশেষ অধিবেশন আরও ৫ দিন চলবে। তবে আস্থা ভোট কবে নাগাদ আয়োজন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও গৃহীত হয়নি।  

সূত্র : রয়টার্স।

এসএমডব্লিউ