করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আগামী ১ আগস্ট থেকে লকডাউন ও জরুরি অবস্থা শিথিলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মালয়েশিয়ার বিরোধী রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন পার্টি (ডিএপি)। সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।

ডিএপির অভিযোগ, সরকার কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলে ভাইস চেয়ারম্যান গোবিন্দ সিং ডিও বিবিসিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনো প্রকার আলোচনা না করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ রকম কেন হলো? আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো না কেন?’

‘দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিল করার অর্থ মহাবিপদকে আমন্ত্রণ জানানো। আমাদের প্রশ্ন হলো- কার মাথা থেকে এই বুদ্ধি এসেছে?’

গত জুন মাসের শেষ থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১ জুলাই মালয়েশিয়ায় মাসব্যাপী লকডাউন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশটির সরকার; যার মেয়াদ ৩১ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে।

সোমবার (২৬ জুলাই) মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে দেশটির আইনমন্ত্রী তাকিউদ্দিন হাসান জানান, ৩১ জুলাইয়ের পর লকডাউন ও জরুরি পরিস্থিতির মেয়াদ আরও বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৭১ জন এবং মারা গেছেন মোট ৮ হাজার ৪০৮ জন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১১৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ২০৭ জন। তবে দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনায় প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

কারণ, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ায় করোনা টেস্ট হয়েছে অনেক কম।

দেশটির বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন প্রচুর করোনারোগী ভর্তি হতে আসছেন। ফলে, বাধ্য হয়েই সেই রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মৃতদেহ সৎকারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা মৃতদেহ দাফন করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন এবং গত এক সপ্তাহে যেসব মৃত করোনা রোগীকে তারা কবরস্থ করেছেন, তাদের অধিকাংশই বাড়িতে মারা গেছেন।

মালয়েশিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যেখানে গত এক মাসের লকডাউন ও জরুরি অবস্থা কাঙ্খিত সাফল্যের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারে নি, সেখানে ১ আগস্ট থেকে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’।

তবে সরকারের করোনা প্রতিরোধ টাস্কফোর্সের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত প্রায় এক মাসের লকডাউন-জরুরি অবস্থার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এবং নিম্নবিত্ত ও শ্রমিক পর্যায়ের লোকজনের সীমাহীন দুর্দশার কারণে সরকার বাধ্য হয়েই এর মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মালয়েশিয়ার অনেক দরিদ্র পরিবার লকডাউনে কাজ হারিয়ে একবেলা খেয়ে দিনযাপন করছে- এমন বেশ কিছু করুন মানবিক প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মালয়েশীয় সংবাদ মাধ্যমে।

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ