সাবেক এক কূটনীতিকের মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার ওই মেয়ের প্রেমিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পারিবারিক নির্যাতনবিরোধী আইন প্রণয়নের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে সেখানে।

ইসলামাবাদ পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হত্যার শিকার নূর মোকাদ্দেম (২৭) পাকিস্তানের সাবেক এক কূটনীতিকের মেয়ে। গত ২০ জুলাই ইসলামাবাদের এক অভিজাত এলাকা থেকে নূরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, হত্যাকারী নূরের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলেছিল।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ইসলামাবাদ পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, নূরের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল জহির জাফর নামের এক যুবকের। ইসলামাবেদের এক সম্পদশালী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান জহির জাফর ১৭ জুলাই নূরকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ডেকেছিল।

নূর সেখানে পৌঁছানোর পর দুই দিন তাকে সেই অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি রেখে ধর্ষণ করে জহির, তারপর হত্যা এবং দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ইসলামাবাদের একটি অভিজাত এলাকায় সড়কের পাশে ফেলে দেয় নূরের লাশ। বর্তমানে ইসলামাবাদ পুলিশের হেফাজতে আছে সে।

এদিকে, দেশটির স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে রাজধানীসহ দেশটির বড় শহরসমূহে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ইসলামাবাদে শত শত মানুষ নূর মোকাদ্দেম হত্যার ন্যায়বিচার ও জহিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।

পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসমূহেও এখন প্রাধান্য বিস্তার করেছে ‘জাস্টিসফরনূর’ হ্যাশট্যাগ।

দেশজুড়ে চলমান প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে জহির জাফরের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারাও চান, নূর মোকাদ্দেমের হত্যাকারী জহির জাফর যেন সর্বোচ্চ সাজা পায়।

পাকিস্তানে প্রতি বছর কয়েক হাজার নারী সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হন, আর একই কারণে প্রাণ হারান শতাধিক নারী। দেশটির মানবাধিকার সংস্থাসমূহ বহুদিন ধরেই নারী নির্যাতন ও পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

নূর মোকাদ্দেম হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলসমূহেও ঘুরে ফিরে এই দাবি উঠে আসছে।

প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়া আমেনা সালমান বাট নামের এক নারী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমারও মেয়ে আছে; আর এ ঘটনার পর থেকে দিন রাত এখন আমার কেবল একটিই দুশ্চিন্তা হচ্ছে- যদি আমার মেয়ের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটে তাহলে আমার পক্ষে কে দাঁড়াবে?’

লাহোরের নারী সাংবাদিক বেনাজির শাহ রয়টার্সকে বলেন, ‘নূর মোকাদ্দেমের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি আমি যে কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, প্রত্যেকেই বলেছেন- তারা তাদের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

সম্প্রতি পাকিস্তানের আইন প্রণেতারা নারী নির্যাতন ও পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধী একটি বিল উত্থাপন করেছেন এবং এ সম্পর্কিত মতামত জানতে দেশটির প্রভাবশালী সংস্থা ইসলামিক স্কলার কাউন্সিলে পাঠিয়েছেন সেই বিল। কাউন্সিল অনুমোদন দিলে তা আইনে পরিণত হবে।

তবে বিলটি অনুমোদন দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে কাউন্সিল। সংস্থাটির প্রধান কিবলা আয়াজ রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং আমরা সবাই চাই নারীর ওপর সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ হোক….কিন্তু আমাদের সন্দেহ হচ্ছে- এই বিল অনুমোদন দেওয়া হলে পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ