১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে রাজকীয় শাসনামল শেষ হয়। এরপর থেকে দেশটির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার কথা রাজা-রানির। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রায় সময় ব্যতিক্রম দেখা যায়। ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে ১৩ বার সফল সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। আর এর সবগুলোতেই সমর্থন দিয়েছেন দেশটির রাজা।

রাজার এই ক্ষমতা বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা। গতবছরের মাঝামাঝি থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। রাজকীয় ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা ছাড়াও দেশটির বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রাজার রাজনৈতিক ক্ষমতা কমানো ও রাজপরিবারের খরচ কমানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।

থাইল্যান্ডে রাজপরিবারের সমালোচনা করার দায়ে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর্টিকেল ১১২ আইন অনুযায়ী এই সাজা দেওয়া যায়। গতবছর আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই আইনের আওতায় রাজপরিবারকে অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

সম্প্রতি তাদের ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ২৫ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী পাতসারাভালে তানাকিতভিবুলপন তাদের একজন। গতবছর গ্রেফতার হওয়ার পর ‘রাজপরিবারকে অসম্মান’ না করার শর্তে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি আর্টিকেল ১১২ প্রয়োগ করে আমাদের নীরব রাখার চেষ্টা করে তাহলে আমরা বুঝতে পারি, আমরা শুধু রাজার প্রশংসা করতে পারব, কোনো প্রশ্ন করতে পারবো না।’

গত বুধবার ছিল থাইল্যান্ডের রাজা মাহা ওয়াচিরালংকনের জন্মদিন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সেদিন হলুদের পরিবর্তে কালো পোশাক পরতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছিল।

গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন আপাতত স্তিমিত হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে যে রাজপরিবারের সংস্কারের কথা তোলা গেছে সেটাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন থাই শিক্ষাবিদ পাভিন চাচাভালপোঙপুন। তিনি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক এবং বর্তমানে জাপানে নির্বাসনে আছেন।

হংকংয়ের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থাই রাজনীতির গবেষক জমেস বুকাননও মনে করেন, রাজপরিবারের নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা ‘একটি বড় ঘটনা’। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মূল সাফল্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করা নিয়ে ট্যাবু ভাঙা ও আর্টিকেল ১১২-র ভয় কাটানো।’

শিক্ষাবিদ পাভিন মনে করেন, আন্দোলনকারীদের তাদের দাবি রাস্তা থেকে সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায় যেতে হবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটা কঠিন বলেও মনে করেন তিনি। কারণ থাইল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। রাজা ওয়াচিরালংকন এতে সমর্থন দিয়েছেন।

তবে রাজপরিবারের সংস্কারের বিষয়টি যেহেতু এখন জনগণের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে তাই সরকার বিষয়টি চেপে যেতে পারবে না বলে মনে করেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী পাতসারাভালে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম