ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীর বহুল আলোচিত ‌সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনার মামলার তদন্ত কাজের দায়িত্ব পাওয়া ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ ওই রাজ্যে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। শনিবার বেঙ্গালুরুর একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ভুয়া নথিপত্র উদ্ধার করেছে এনআইএ।

ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, বাংলাদেশি পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেঙ্গালুরুর অন্তত দু’টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে দেশটির জাতীয় এই তদন্ত সংস্থা। এক বিবৃতিতে এনআইএ বলছে, তল্লাশির সময় বিভিন্ন অপরাধমূলক নথি, জাল কাগজপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হার্ডডিস্ক এবং মোবাইল ফোনসহ ছয়টি ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি এক তরুণীকে গত মে মাসে পাচারকারী একটি চক্র বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে পাচারকারী ওই চক্র বাংলাদেশি তরুণীকে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। পরে গত ২১ মে বাংলাদেশি ওই তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর এই ঘটনা উভয় দেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে।

বাংলাদেশি তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় এক ডজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে দু’জন নারী ও ১১ জন পুরুষ।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ২০-২২ বছরের একজন তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩ থেকে ৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশেও তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে পুলিশ ভিডিওটির একজনের সঙ্গে বাংলাদেশি এক তরুণের ছবির মিল খুঁজে পায় এবং নির্যাতনকারী ওই যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত এই মানবপাচারকারী রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। রিফাতুল ইসলাম হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকে শনাক্ত করা হয়। সেই সময় নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। 

বেঙ্গালুরু পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধও হন। বেঙ্গালুরু পুলিশ বলছে, ধর্ষণের শিকার তরুণী বাংলাদেশের একটি মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়েছেন। পরে জোরপূর্বকভাবে ওই তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে পাচারকারীরা। টাকা নিয়ে বিবাদের কারণে ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে।

এই চক্রটি বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটকে নারী ও তরুণীদের পাচার করে। 

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইকোনমিক টাইমস।

এসএস