চরম তাপপ্রবাহ আগে প্রতি ৫০ বছরে একবার আঘাত হানলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং ঘন ঘন খরা দেখা দেওয়ায়, বর্তমানে তা প্রতি দশকে একবার ঘটতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) এক প্রতিবেদন এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে মানবসভ্যতা চূড়ান্ত বিপদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য মানবজাতিকে পুরোপুরি দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আইপিসিসি বলছে, আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের সেই প্রভাবগুলো অনুভব করতে শুরু করেছি। কারণ এই গ্রহের গড় উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। তাপদাহ, খরা ও মুষলধারে বৃষ্টি আরও ঘন ঘন এবং চরম হতে চলেছে। পৃথিবী আরও উষ্ণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চরম প্রভাবের  সম্ভাব্য বেশ কিছু দৃশ্যকল্প নির্ধারণ করেছে।

আইপিসিসি বলেছে, এক দশকে একবার ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা এখন ১ দশমিক ৩ গুণ এবং ভেজা জলবায়ুর পরিমাণ ৬ দশমিক ৭ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ১৯০০ সাল পর্যন্ত আগের ৫০ বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সেই সময় মানবসভ্যতা-চালিত উষ্ণতার বিস্তার শুরু হয়েছিল। আগে খরা দশকে একবার প্রতি পাঁচ বা ছয় বছর পর হতো।

বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবগুলো ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপদাহের কারণে গত জুনে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ব্রাজিল বর্তমানে গত ৯১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার মুখোমুখি হয়েছে।

আইপিসিসির গবেষক দলের প্রধান, পরিবেশবিদ এবং সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাওলো আরট্যাক্সো বলেছেন, ‘কানাডায় তাপদাহ, ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, জার্মানিতে বন্যা, চীনে বন্যা, ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের খরা এটি খুব স্পষ্ট করে তুলেছে যে, জলবায়ু প্রচণ্ড ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।’

তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ এবং আরও বেশি উষ্ণতার অর্থ ঘন ঘন চরম বৈরীতা সামনে অপেক্ষা করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুর কারণে মানবসভ্যতার ক্ষতি আরও তীব্র হতে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আইপিসিসি বলেছে, আগে এক শতাব্দিতে দু’বার তীব্র তাপদাহ দেখা গেলেও এখন প্রতি ছয় বছরে একবার তা দেখা যেতে পারে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে পারে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। আর এটি আগামী দুই দশকের মধ্যেই ঘটতে পারে।

আইপিসিসির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে পৃথিবী যদি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে যায়, তাহলে উচ্চ-নির্গমন ঘটতে পারে। তখন সেই তাপপ্রবাহ প্রতি এক থেকে দুই বছর পরপর ঘটবে।

বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কৃষি অঞ্চলে আরও খরা বা চরম বৃষ্টিপাত দেখা যাবে বলে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল মাঝারি থেকে উচু-স্তরের আস্থার কথা জানিয়েছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া এবং ব্রাজিলের কিছু অংশ; যে অঞ্চলগুলো সয়াবিন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক পণ্যের প্রধান উত্পাদনকারী।

ব্রাজিলের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জোসে মারেনগো বলেছেন, এটা নিশ্চয় ভীতিকর যে, দাবানল, তাপদাহ এবং খরা প্রধানত দরিদ্র অঞ্চলের আবহাওয়া ও খাদ্য-জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা, পানির গুণমান এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।

ব্রাজিলের এই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিবেদন প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আগামী দুই দশকের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এটি ঘটলে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাসে বিশ্বনেতারা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন, তা পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস