বোমা বিস্ফোরণের পর চীনা প্রকৌশলীদের বহনকারী বাসটি গিরিখাদে পড়ে যায়

পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে গত মাসে চীনা প্রকৌশলীদের বহনকারী একটি বাসে প্রাণঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় ভারত ও আফগানিস্তানকে দায়ী করেছে ইসলামাবাদ। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। গত মাসে হওয়া ওই প্রাণঘাতী হামলায় ১০ জন চীনা নাগরিক ও ৩ পাকিস্তানিসহ মোট ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কুরেশি বলেন, বাসে ওই হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি তালেবান এবং ভারতীয় ও আফগান তদন্ত সংস্থাগুলো ওই হামলায় ভূমিকা রেখেছে। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সেসময় পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দেশটির জ্যেষ্ঠ কাউন্টার-টেররিজম পুলিশ কর্মকর্তা জাভেদ ইকবাল এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে কুরেশি বলেন, বিস্ফোরক-বোঝাই ওই বাসের চালকই এই হামলা চালিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে আঙ্গুলের একটি ছাপ এবং একটি আঙ্গুলসহ দেহের অন্যান্য ছিন্ন অংশ উদ্ধার করেছি। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ব্যক্তিটি নিশ্চিতভাবেই ওই গাড়ির চালক।’

তিনি আরও বলেন, হামলায় ব্যবহৃত ওই গাড়িটিকে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছিল। কুরেশি বলেন, তদন্তে আমরা এই হামলার পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এবং আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটির (এনডিএস) যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছি।

অবশ্য পাকিস্তানের এই অভিযোগের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত ও আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ১৪ জুলাই সকালে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কোহিস্তান জেলায় যাত্রীবাহী বাস দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাওয়ার পথে গিরিখাদে পড়ে যায়। খাদে পড়ার আগে বাসটিতে বিস্ফোরণ হয়। এতে ১০ চীনা নাগরিকসহ ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আরও ২৮ জন। নিহত ওই চীনা ব্যক্তিরা দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- এই হামলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হামলা পরিচালনা করা পর্যন্ত, সকল কাজেই আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে। আর এতেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং আফগান গোয়েন্দা সংস্থা এনডিএস এই হামলার সঙ্গে জড়িত।’

চীনের অর্থায়নে পাকিস্তানে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) নামে যে ৬৫০ কোটি ডলারের বিশাল প্রকল্পের কাজ চলছে, তারই একটি অংশ দাসু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন। চীনের ভবন ও সড়ক নির্মাণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এই প্রকল্পটির কাজ তদারকি করছে।

সিপিইসি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হলে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গোয়াদর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের অবকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও করছে বিআরআই।

টিএম