কাবুলের রক্তপাতহীন পতনের পর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে। রোববার তালেবানরা কাবুল দখল করার পর ১২৯ যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান কাবুল ত্যাগ করে।  

ভারতীয় সময় রোববার রাত ৮টায় বিমানটি দিল্লির বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আফগান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন এই বিমানে কাবুল ছাড়েন। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। বড় কোনো বিপদের আগে দেশ ছাড়তে পেরেছেন- এটাই এখন তাদের কাছে সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয়। 

ওই বিমানে কাবুল ছেড়ে ভারত আসাদের তালিকায় রয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্টের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আহামদিজাই। তিনি বলছেন, এই বিমানটি ছিল আমার শেষ সুযোগ। আমি জানতাম আমি বিপদে আছি, আর সে জন্যই আমি দিল্লিতে চলে এসেছি। তালেবানরা কাবুলে ঢুকতে শুরু করলে আমি সকাল (রোববার) সাড়ে ৮টার দিকে বিমানবন্দরে চলে যাই। 

তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের ১০ জন এখনও আফগানিস্তানে রয়ে গেছে। তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। তারা যাতে আফগানিস্তান থেকে বের হতে পারে সে ব্যবস্থা করবো।   

দেশের জন্য ২০ বছর কাজ করার পর সেই দেশ থেকেই পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া আহামদিজাইয়ের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। 

একই বিমানে পালিয়ে আসা আরেক নারী বললেন, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না সারা পৃথিবীর কেউ সাড়া দিচ্ছে না। ওখানে আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যারা আছে তাদের মেরে ফেলা হবে। 

২০ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ মাসুদির ভেতর দুরকম অনুভূতি কাজ করছে। একদিকে তিনি খুশি যে তালেবানের হাতে পড়ার আগে তিনি আফগানিস্তান ছাড়তে পেরেছেন, আবার অন্যদিকে কাবুলে তার স্বজনদের নিয়ে তিনি চিন্তিত। 

তিনি বলেন, দিল্লিতে পৌঁছে প্রথমেই আমি যে কাজটা করেছি, তা হলো আমার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছি যে, আমি এখন নিরাপদ। যেহেতু আমি এখানে (ভারত) বিবিএ করছি, তাই আমার আজকে আসার তারিখটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। যাই হোক, এখন আমার পরিবার আর আফগানিস্তানে থাকতে চায় না। কিন্তু এখন এ পরিস্থিতিতে ভিসা পাওয়াটাই মুশকিল।  

একই বিমানে দিল্লি পৌঁছেছেন আফগান এমপি জাজাই। তিনি বলেন, তালেবানদের মুখপাত্ররা বারবার ঘোষণা দিচ্ছে, কারো দেশ থেকে পালানোর দরকার নেই, কারো কোনো ক্ষতি করা হবে না। কোনো ধরনের হানাহানি ছাড়াই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

আফগান নাগরিকদের অনেকে বলছেন, তারা শেষ পর্যন্ত দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। সাবেক ইসা নামে  একজন বললেন, কাবুলের পরিস্থিতি যদি ভালো হয় তবে আমি ফিরে যাবো। তা না হলে আমি জার্মানি চলে যাবে, সেখানেই আমি ২০ বছর ছিলাম।  

১৬২ যাত্রীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ফ্লাইট এএল ২৪৪ আফগানিস্তান সময় সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ১২৯ জন যাত্রী নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে কাবুল বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাকি যাত্রীরা সম্ভবত বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। বিমানটিতে ভারতীয় নাগরিক যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন আফগান নাগরিকরাও। শিভ করন নামে ওই বিমানের একজন ভারতীয় যাত্রী বললেন, ক্ষমতার হস্তান্তরের আগেই আমি বিমানবন্দরে পৌঁছে যাই। স্থানীয়রা অনেক সাহায্য করেছে। 

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া। 

এনএফ