উত্তরাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘু মসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চীন গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় কমিশন।

দ্য কংগ্রেশনাল-এক্সিকিউটিভ কমিশন অন চায়না (সিইসিসি) বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) জানিয়েছে, গত বছর চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সম্ভবত গণহত্যা চালানো হয়েছে’ বলে নতুন কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত উইঘুর মুসলিমদের চীন হয়রানি করছে বলেও জানিয়েছে ওই কমিশন।

সমগ্র জিনজিয়াংজুড়ে ‘ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়ে থাকে চীন। মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের নামে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্রগুলোতে উইঘুরসহ সংখ্যালঘু মুসলিমদের আটক করে রাখা হয়।

তবে চীনা সরকারের দাবি, ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য নির্মূলের লক্ষ্যেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, জিনজিয়াংয়ে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক করে রেখেছে বেইজিং।

ধর্মীয় নেতা, বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপসহ অন্যরা বলছে, গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়মিতই ঘটছে সেখানে। অবশ্য ক্ষমতার অপব্যবহারের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।

জিনজিয়াংয়ে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কিনা তা জানতে রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তে নামার আহ্বান জানিয়েছে সিইসিসি।

অবশ্য ওয়াশিংটন ডিসিতে অস্থিতিশীল অবস্থা সত্ত্বেও বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইতোমধ্যেই এই তদন্তের কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সিইসিসি’র সহ-সভাপতি ও ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা জিম ম্যাকগভার্ন বলেছেন, গত বছর চীনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড মানবাধিকারকে ভূলুন্ঠিত করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আর তাই মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য বেইজিংকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কংগ্রেস ও ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা বাইডেন প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন,‘চীনের নির্যাতনের কারণে সংগ্রামরত মানুষের পাশে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। একইসঙ্গে চীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওয়াশিংটনকে কাজ করতে হবে।’

এদিকে গত বুধবার চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করিয়ে উৎপাদন করানো বিভিন্ন পণ্য, বিশেষ করে সব ধরণের তুলা ও টমেটো আমদানিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের কাজকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা (সিবিপি) থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , জিনজিয়াংয়ের মুসলিম বন্দিদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলা হচ্ছে এবং মুক্ত চলাচলে বাধাও সৃষ্টি করা হচ্ছে।

চীন সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ বলছে, অন্তত ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে তুলা ও টমেটো উৎপাদনে উইঘুরদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তুলা উৎপাদন হয় চীনের জিনজিয়াংয়ে। সেগুলো জোর করে শ্রম আদায় করে উৎপাদিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণে টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সচেতন নয় বলেও উদ্বেগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম