করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রকোপে টিকার কার্যকারিতা ২৫ শতাংশ কমেছে। পূর্বে করোনা প্রতিরোধে যে টিকার কার্যকারিতা ছিল ৯১ শতাংশ, প্রাধান্য বিস্তারকারী ধরন হিসেবে ডেল্টার উত্থানের পর তার কার্যকারিতা নেমে এসেছে ৬৬ শতাংশে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সিডিসির (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল) সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এই তথ্য বলা হয়েছে।

তবে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাজারের প্রচলিত টিকাসমূহ এখনও করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টিকার কার্যকারিতা কমা কোনো ‘অস্বাভাবিক’ ব্যাপার নয়।

সিডিসির বিশেষজ্ঞরা এ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ সমীক্ষায় যদিও দেখা গেছে, ডেল্টার কারণে টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু তারপরও আমরা বলব- করোনা প্রতিরোধে এখনও টিকার ডোজ গ্রহণ লাভজনক এবং মহামারিকে নির্মূল করতে হলে আপাতত টিকার কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই।’

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৬ অঙ্গরাজ্যের টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধার শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিসির কর্মকর্তারা।

যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের দুই তৃতীয়াংশই ফাইজার- বায়োএনটেকের করোনা টিকা নিয়েছেন। বাকিরা নিয়েছেন জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মডার্নার করোনা টিকা।

এর আগে ইসরায়েল এবং যুক্তরাজ্য জানিয়েছিল, ডেল্টা ধরনের বিস্তারের কারণে করোনা টিকার কার্যকারিতা কমে আসছে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের করোনা টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়াও শুরু করেছে এ দুটি দেশ।

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে সুস্থ সাধারণ মানুষের দেহে যে পরিমাণ করোনা প্রতিরোধী শক্তির উপস্থিতি থাকার কথা, তার চেয়ে কম প্রতিরোধী শক্তির লোকজনকে করোনার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।

এর আওতা আরও বাড়ানো হবে কি না সে বিষয়ে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএর (ফুডস অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সঙ্গে আলোচনা করে সেপ্টেম্বরে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিসির কর্মকর্তারা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টা। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১২০ টিরও বেশি দেশে এই ধরনটিতে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

গত ৩০ জুলাই এক প্রতিবেদনে সিডিসি জানিয়েছিল, করোনাভাইরাসের মূল ধরনটি এতটা সংক্রামক ছিল না, সেটা ছিল অনেকটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের মতো, যেখানে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে আরও দুইজনকে আক্রান্ত করতে পারতেন।

কিন্তু ডেল্টায় আক্রান্ত একজন রোগীর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন গড়ে অন্তত ৮ থেকে ৯ জন মানুষ। এমনকি, করোনা টিকার ডোজ নেওয়ার পরও যদি কেউ ডেল্টায় আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে তিনি নিজের নাক ও গলায় টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মতো বিপুল পরিমাণ ভাইরাস বহন করেন।

মঙ্গলবার প্রকাশিত সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে বাজারে প্রচলিত টিকাসমূহের কার্যকারিতা এখনও ৮০ শতাংশ আছে।

সূত্র : ব্লুমবার্গ

এসএমডব্লিউ