আহমাদ মাসুদ

আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকা পাঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক জোট নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রধান আহমাদ মাসুদ বলেছেন, তিনি প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করে নেবেন, তবুও আত্মসমর্পণ করবেন না।

ফরাসি সাংবাদিক বারনার্ড হেনরি লেভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানের এই বিদ্রোহী নেতা বলেন, ‘তালেবান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের পরিবর্তে আমি বর‌ং মৃত্যুকে বরণ করে নেব। আমি আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে। আমার ডিকশনারিতে আত্মসমর্পণ বলে কোনো শব্দ নেই।’

২০০১ সালে মার্কিন-ন্যাটো অভিযানে ক্ষমতা হারানো তালেবান বাহিনী ২০ বছর পর আবারও আফগানিস্তানে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি বছর মে মাস থেকে আফগানিস্তান দখলের অভিযানে নেমেছিল তালেবান, দেশের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ২৮ টির দখল নেওয়ার পর গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলও দখল করে নেয় এই কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী।

দেশের যেসব এলাকা এখনও নিজেদের অধীনে আনতে পারেনি তালেবানগোষ্ঠী, সেগুলোর মধ্যে পাঞ্জশির অন্যতম এবং এ ব্যাপারটি নিয়ে এক প্রকার চাপেও আছেন তালেবান নেতারা।

তাদের চাপের আর একটি কারণ- আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এবং দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহম্মদিসহ দেশটির সাবেক সরকারের কয়েকজন তালেবানবিরোধী কর্মকর্তা বর্তমানে পাঞ্জশিরে আত্মগোপনে আছেন।

সাক্ষাৎকারে আহমাদ মাসুদ বলেন, সম্প্রতি হাজার হাজার মানুষ নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্টে যোগ দিচ্ছেন।

আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী লড়াইকে এগিয়ে নিতে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সমর্থন চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে না থাকার জন্য খেদও জানিয়েছেন এই বিদ্রোহী নেতা।

সাক্ষাৎকারে বারনার্ড হেনরি লেভিকে তিনি বলেন, ‘কাবুল দখলের আট দিন আগে তালেবান বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে আমি মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছে অস্ত্রশস্ত্র চেয়েছিলাম; কিন্তু তখন তারা আপত্তি করেছিলেন।’

‘তাদের আপত্তির ফলাফল কী হয়েছে- তা আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার, আমেরিকান ট্যাঙ্ক- সব এখন তালেবানদের দখলে।’

তবে তালেবান বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চলতে পারে বলে জানিয়েছেন আহমাদ মাসুদ। তাছাড়া, তালেবান যদি কয়েকটি শর্ত মানে সেক্ষেত্রে সংঘাত এড়ানো যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

‘আমরা আলোচনা করতে পারি। যেকোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রে আলোচনার ব্যাপারটি থাকে এবং আমার বাবাও সবসময়ে তার শত্রুদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।’

‘আর তালেবান যদি নারী অধিকার, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার, গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের শর্তসমূহের প্রতি সম্মান দেখায়, সেক্ষেত্রে সংঘাত এড়ানোও যেতে পারে।’

আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল পাঞ্জশির বরাবরই দখলমুক্ত ছিল। ১৯৭৯ সালে সাবেক সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে অভিযান চালালেও পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে দেশটিতে যখন তালেবান বাহিনী প্রথম সরকার গঠন করল, তখনও অপরাজিত ছিল পাঞ্জশির।

এর মূল কৃতিত্ব অবশ্য নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সাবেক নেতা আহমদ শাহ মাসুদের সাহসী ও কৌশলী নেতৃত্বের। নিজের নেতৃত্বগুণ ও সাহসিকতার জন্য যিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পাঞ্জশিরের সিংহ’ নামে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারে হামলার দুই দিন আগে, ৯ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা নেটওয়ার্কের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হন আহমদ শাহ মাসুদ।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ