উগ্র জাতীয়তাবাদী ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের কারণে বিতর্কিত এক বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথুকে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। গত ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আটক করেছিল তাকে।

বিবিসি লিখেছে, ভিক্ষু আশিন উইরাথু সামরিক জান্তাদের পক্ষে তার কট্টর অবস্থানের জন্য পরিচিত। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন-লাদেনের সঙ্গে তুলনা টেনে তাকে বৌদ্ধাদের ‘বিন-লাদেন’ নামেও ডাকা হয়। 

মুসলিবিরোধী অবস্থান, বিশেষত মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্যই মূলত তাকে ‘বৌদ্ধদের বিন-লাদেন’ নামে ডাকা হয়। অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা জান্তা উগ্রপন্থী উইরাথু মুক্তি দিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিক্ষু আশিন উইরাথু সামরিকপন্থী সমাবেশে জাতীয়তাবাদী বক্তৃতা প্রদান এবং তৎকালীন নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নেতৃত্বাধানী মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করেছিলেন।

২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে নির্বচিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছড়ানো ও অবমাননা’ উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর থেকে পলাতক ভিক্ষু উইরাথু গত নভেম্বরে কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর থেকে তিনি বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন।

সোমবার সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে, কিন্তু এর কোন কারণ জানানো হয়নি। চিকিৎসা নিতে তিনি সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হবেন জানানো হলেও ভিক্ষু উইরাথুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

মিয়ানমারে মুসলিম ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কথিত ৯৬৯ নামক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেস উইরাথু। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বৌদ্ধদের নিজ ধর্মের মধ্যে কেনাকাটা, সম্পত্তি বিক্রি ও বিয়ের দাবি তোলা হয়।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় তার লাখ লাখ ভক্ত-অনুরাগী তার উসকানিমূলক বক্তব্য শুনতো ও তিনি যে সমাবেশে যেতেন সেখানে উপস্থিতি হতেন। ২০১২ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধদের মারাত্মক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার জন্য তার বক্তৃতাকে দায়ী করা হয়।

পরে বছর টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তার ছবি আসে। যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর’ কিংবা ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদের মুখ’। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ পরিষদ তার ভিক্ষু পদ এক বছরের জন্য বাতিল করে। ২০১৮ সালে তার পেজ বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। উল্লেখ্য, সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশ মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

এএস