বাঁ থেকে যথাক্রমে সিআইএ প্রধান, ভারতের এনএসএ ও রাশিয়ার এনএসএ।

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে সরগরম দিল্লি। তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের পরদিনই দিল্লিতে এসেছেন রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান। দুজনেই পৃথকভাবে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।

আজ বুধবার দুপুরে দিল্লিতে বৈঠক করেন রাশিয়ার জাতীয় উপদেষ্টা নিকোলাই পাত্রশেভ ও ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন নিকোলাই।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপরেই এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্রের বরাতে জানা গেছে।

তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা সংবাদমাধ্যমকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্র জানাচ্ছে, মূলত আফগানিস্তান পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য আগেই তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।

আফগানিস্তানে রাশিয়ার দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি। রাশিয়ার আশা ছিল, তালেবান সব পক্ষকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করবে। কিন্তু মঙ্গলবার তালেবান যে মন্ত্রিসভার ঘোষণা দিয়েছে, রাশিয়া সেটা নিয়ে খুশি নয় বলেই জানা যাচ্ছে। 

ভারতের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় সামনে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতও আফগানিস্তান পরিস্থিতি, পাকিস্তানের ভূমিকা, চীনের অবস্থান নিয়ে বৈঠকে সংশয় প্রকাশ করেছে। দুই দেশ এই বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। 

আফগানিস্তান পরিস্থিতি ভারতীয় উপমহাদেশের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারত। সূত্র এমনই জানিয়েছে। দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) পর্যায়ের ওই উঠেছে কাশ্মীর প্রসঙ্গও উঠেছে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার অত্যন্ত গোপনে অজিত দোভাল বৈঠক করেছেন সিআইএ প্রধান উইলিয়াম জে বার্নসের সঙ্গেও। বুধবার এ খবর জানা যায়। বুধবারও দিল্লিতেই আছেন উইলিয়াম। জানা গেছে, মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা সিআইএ-এর প্রধানও মূলত আফগানিস্তান নিয়েই বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও ভারত এবং মার্কিন প্রশাসন এই বৈঠক নিয়ে একটি মন্তব্যও করতে চায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সফরের মূল লক্ষ্য আফগানিস্তান পরিস্থিতি।

সম্প্রতি কাবুলে তালেবানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন সিআইএ প্রধান। মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার নিয়েই তিনি আলোচনা করেন বলে জানা গেছিল। তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের পরদিনই তার ভারত সফরে আসা অন্য বার্তা বহন করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

ডয়েচে ভেলে আরও জানিয়েছে, তালেবানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তাকীলন মন্ত্রিসভা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও সন্তুষ্ট নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি নিয়েই ভারতীয় এনএসএ-এর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছে বলে অভিযোগ আছে। আইএসআই তালেবানের পেছনে আছে বলেও অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ভারত এ বিষয়ে অভিযোগ করেছে। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব ভারত।

এমন এক পরিস্থিতিতে একইদিনে ভারতের রাজধানী শহরে সিআইএ-র প্রধান এবং রাশিয়ান এনএসএ-এর উপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এএস