প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন লেবাননের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নাজিব মিকাতি।

গত বছরের আগস্টে রাজধানী ও বন্দরনগরী বৈরুতে ভয়াবহ একটি বিস্ফোরণের পর পদত্যাগ করেছিল লেবাননের তৎকালীন সরকার। তার এক বছর পার হয়ে গেছে। এই এক বছরে আরও ঘনীভূত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সংকট। অবশেষে আজ শুক্রবার লেবাননে নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন লেবাননের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নাজিব মিকাতি। এর আগেও দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এই ধনকুবের। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকট শেষে নতুন মন্ত্রিসভার নামও ঘোষণা করা হয়েছে। লেবাননের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে নতুন সরকারের ঘোষণা আসলো।    

দেশটির মুদ্রার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রকট হয়েছে বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। বৈরুত বিস্ফোরণের আগে থেকে বিগত দুই বছর ধরে দেশটির মানুষ আমূল রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। 

২০২০ সালের ৪ আগস্ট বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব পদত্যাগ করার পর থেকে দেশটি স্থায়ী সরকারবিহীন অবস্থায় চলছিল। ওই বিস্ফোরণে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন অন্তত ছয় হাজার মানুষ। চারপাশ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। ক্ষতির পরিমাণ ছিল শত কোটি ডলার। 

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল লেবানন। ফলে সংকট আরও ঘণীভূত হয়। ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। ক্ষুব্ধ মানুষজন রাস্তায় দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও রাজনৈতিক আনুগত্যের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।   

বাঁ থেকে স্পিকার নাবিহ বেরি, প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এবং প্রেসিডেন্ট মিচেল ওউন।

২০১৯ সালের শেষদিকে লেবাননে অর্থনৈতিক সংকট শুরুর পর থেকেই দেশটির মানুষের মধ্যে এই ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। বিবিসি বলছে, গত কয়েক মাসেই লেবানিজ মুদ্রা ৯০ শতাংশ মূল্যমান হারিয়েছে। অপরদিকে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো বাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। 

বিবিসি বলছে, বিরোধী দল মনোনীত টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা সম্ভবত একটি উদ্ধার প্যাকেজে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পথ সুগম করবে। লেবাননের নাজুক সাম্প্রদায়িক ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা হাসান দিয়াবের পদত্যাগের পর সরকার গঠনের প্রচেষ্টা বারবার রুদ্ধ করে দিয়েছে।

১৯৭৫-৮৯ সালের গৃহযুদ্ধ পর এবারই রাজনৈতিক ক্ষমতা বহু সম্প্রদায়ের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা হয়েছে। যেখানে প্রেসিডেন্ট খ্রিস্টান, প্রধানমন্ত্রী সুন্নি মুসলিম এবং স্পিকার শিয়া মুসলিম। মন্ত্রী মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং জোটের সন্তুষ্টি বিবেচনায় একটি সমঝোতায় আসায় পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী শুক্রবার লেবাননের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি, প্রেসিডেন্ট মিচেল ওউন এবং স্পিকার নাবিহ বেরির উপস্থিতিতে শুক্রবার লেবাননের নতুন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করে ডিক্রি জারি করা হয়।  

এএস