একটা গণ্ডারকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখলে তার দেহে কী প্রতিক্রিয়া হয়? এই আজব বিষয়ে গবেষণার জন্য একদল বিজ্ঞানীকে এ বছরের ব্যঙ্গাত্মক ‌‌‘ইগ নোবেল পুরস্কার’ দেয়া হয়েছে। একদল বিজ্ঞানী নামিবিয়ায় গিয়ে এই অভিনব পরীক্ষা চালিয়েছিলেন।

বিজ্ঞানভিত্তিক রম্য পত্রিকা অ্যানালস অব ইমপ্রোব্যাবল রিসার্চ— এই ইগ নোবেল পুরস্কার দিয়ে থাকে। গণ্ডার সংক্রান্ত এই পরীক্ষাটি তাদের বিচারে ‌‌‘পরিবহন গবেষণা’ ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।

অন্য আরো যারা এ পুরস্কার পেয়েছেন— তারাও উদ্ভট বিষয় বেছে নেওয়ার দিক থেকে কম যান না। একটি দল গবেষণা করেছেন ফুটপাতে আটকে থাকা চুইংগামের ভেতরে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তা নিয়ে। আরেক দল গবেষকের বিষয় ছিল— সাবমেরিনের মধ্যে তেলাপোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের উপায় কী।

এই ব্যঙ্গাত্মক নোবেল পুরস্কার অবশ্যই আসল নোবেল পুরস্কারের মত বিখ্যাত নয়, তবে একেবারে অখ্যাতও নয়। এটি দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং তাতে আসল নোবেল-পুরস্কারপ্রাপ্তরা এসে ইগ নোবেল বিজয়ীদের পুরস্কার দেন।

এবার অবশ্য এই মজার অনুষ্ঠানটি হয়েছে অনলাইনে— করোনাভাইরাস মহামারির কারণে। পত্রিকাটির বলছে, এই পুরস্কারের খবর পড়ে প্রথমে আপনি হাসবেন। কিন্তু তার পর এটি আপনাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।

গবেষণায় দেখা যায়, গণ্ডাররা উল্টো হয়ে ঝুলন্ত থাকার সময় আরো বেশি ভালো করে

বলা হচ্ছে, গণ্ডারের গবেষণাটিও ঠিক তেমনি একটি ব্যাপার। কারণ ১২টি গণ্ডারকে ১০ মিনিট ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার মত উদ্ভট কাজ আর কি হতে পারে? কিন্তু নামিবিয়ায় গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু চিকিৎসক রবিন র‍্যাটক্লিফ এবং তার সহকারীরা যে গবেষণাটি করেছেন— তাদের লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার।

তারা জানতে চেয়েছিলেন, প্রাণীদের যখন পায়ে দড়ি বেঁধে হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়— তা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে।

‘নামিবিয়াই প্রথম এটা জানতে চেয়েছে যে আমরা এই কাজটা করছি— এটা গণ্ডারের জন্য কতটা নিরাপদ?- প্রশ্ন করেন তিনি। আফ্রিকার প্রাণী সংরক্ষণের জন্য যারা কাজ করেন তাদের প্রায়ই এ কাজটা করতে হয়। কিন্তু কেউই এই প্রাথমিক গবেষণাটি করে দেখেননি যে— ওষুধ দিয়ে সংজ্ঞাহীন করা অবস্থায় একটি প্রাণীকে এভাবে উল্টো করে উড়িয়ে নিয়ে গেলে তাদের হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের কাজের ওপর কী প্রভাব পড়ে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা নামিবিয়ার পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে ঠিক এটাই পরীক্ষা করেছেন। তারা অবশ্য দেখতে পেয়েছেন যে প্রাণীরা ভালোভাবেই এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে। বিশেষ করে গণ্ডাররা উল্টো হয়ে ঝুলন্ত থাকার সময় আরো বেশি ভালো করে।

পুরস্কার বিতরণী ও ট্রফি

এবারের ইগ নোবেল পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে যে আসল নোবেল বিজয়ীরা ছিলেন— তাদের মধ্যে আছেন ২০১৮ সালের রসায়নে নোবেল জয়ী ফ্রান্সে আর্নল্ড, ২০০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী কার্ল ওয়েইম্যান এবং ২০০৭ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া এরিক ম্যাসকিন।

গণ্ডারকে উল্টো করে ঝুলিয়ে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কতটা নিরাপদ, সেটি জানতে গবেষণা করেন নামিবিয়ার একদল বিজ্ঞানী

পুরস্কার হিসেবে ইগ নোবেলজয়ীরা পেয়েছেন একটি পিডিএফ প্রিন্ট-আউট— যা জোড়া দিয়ে তাদের নিজেদের ট্রফি বানিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও ছিল নগদ অর্থ হিসেবে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি জিম্বাবুয়েইয়ান জাল ব্যাংক নোট।

২০২১ সালের ইগ নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা

জীববিজ্ঞান: সুজান শটৎস। বিড়াল ও মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য ম্যাওম্যাও, গরগর, হিসহিস ইত্যাদি নানা রকম শব্দ ছিল তাদের গবেষণার বিষয়।

পরিবেশ: লেইলা সাটারি ও তার সঙ্গীরা। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল বিভিন্ন দেশের ফুটপাতে আটকে থাকা চুইংগামের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার জিনগত গঠন বিশ্লেষণ।

রসায়ন: ইয়র্গ ভিকার ও সঙ্গীরা। সিনেমা হলের ভেতরের বাতাসের গন্ধের রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং তা থেকে দর্শকরা যে ছবিটি দেখছেন সেটাতে যৌনতা, সহিংসতা, মাদক ব্যবহার বা খিস্তির মাত্রা সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায় কিনা; সেটি জানাই ছিল তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য।

অর্থনীতি: পাবলো ব্লাভাটস্কি। তিনি আবিষ্কার করেছেন যে কোন একটি দেশের রাজনীতিবিদরা কতটা মোটা— তা থেকে দেশটির দুর্নীতির মাত্রার ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

গবেষকরা একটা গণ্ডারকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখলে তার দেহে কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটি দেখেছেন

মেডিসিন বা চিকিৎসাশাস্ত্র: ওলকাই চেম বুলুট ও তার সঙ্গীরা। তারা দেখিয়েছেন যে সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে তা সারাতে যৌনতৃপ্তি যে কোন ওষুধের মতই কার্যকর।

শান্তি পুরস্কার: এথান বেসারিস ও সঙ্গীরা। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল— ঘুষির আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্যই বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের মুখে দাড়ি গজিয়েছে কিনা।

পদার্থবিজ্ঞান: আলেসান্দ্রো করবেটা ও সঙ্গীরা। গবেষণার বিষয়: পথচারীদের কেন সব সময় অন্য পথচারীদের সাথে ধাক্কা লাগে না।

কাইনেটিক্স বা গতিবিদ্যা: হিশাসি মুরাকামি ও সঙ্গীরা। তাদের গবেষণার বিষয়: কেন পথচারীদের সাথে মাঝে মাঝে অন্য পথচারীদের ধাক্কা লাগে।

এনটোমোলজি বা কীটতত্ত্ব: জন মালরেনান ও সঙ্গীরা। বিষয়: সাবমেরিনের ভেতরে তেলপোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের একটি নতুন পদ্ধতি।

পরিবহন: রবিন র‍্যাটক্লিফ ও সঙ্গীরা। বিষয়: গণ্ডারকে উল্টো করে ঝুলিয়ে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কতটা নিরাপদ।

এসএস