বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর তালিকায় থাকা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চরমপন্থী গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ দূত ডেবোরাহ লায়ন্স।

বৃহস্পতিবার টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, ‌‘আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মিশনের প্রধান ডেবোরাহ লায়ন্স এবং সিরাজুদ্দিন হাক্কানির মধ্যে বৈঠকে মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘(হাক্কানি) জোর দিয়ে বলেছেন যে, জাতিসংঘের কর্মীরা কোনও বাধা ছাড়াই তাদের কাজ পরিচালনা এবং আফগান জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে পারবেন।’

আফগানিস্তান ইতোমধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য এবং খরার মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু গত মাসে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দেশটির সরকারি এবং দাতব্য সংস্থার কর্মীরাসহ হাজার হাজার মানুষ চলে গেছে এবং অর্থনৈতিক বেশিরভাগ কর্মকাণ্ড ভেঙে পড়ছে।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক এক সহায়তা সম্মেলনে বলেছেন, আফগানরা সম্ভবত ‘তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মুখোমুখি’ হয়েছেন।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশন বলেছে, বুধবারের বৈঠকে আফগানিস্তানে কোনও ধরনের ভয়ভীতি অথবা বাধা ছাড়াই জাতিসংঘের সব এবং অন্যান্য মানবিক কর্মীদের জরুরি সহায়তা সরবরাহ এবং আফগান জনগণের জন্য কাজের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ডেবোরাহ লায়ন্স।

যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর আফগানিস্তানে দুই দশকের দীর্ঘ যুদ্ধের সময় জাতিসংঘ কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তালেবান। গত মাসে পশ্চিমা বাহিনী প্রত্যাহার এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের পর সেই তালেবান আবারও ক্ষমতায় এসেছে।

২০০৯ সালে কাবুলের একটি অতিথিশালায় তালেবানের জঙ্গিরা রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়ে জাতিসংঘের বিদেশি চার কর্মীকে হত্যা করে। গত জুলাইয়েও হেরাত শহরে জাতিসংঘের একটি ভবনে তালেবানের বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এ সময় তালেবানের রকেট-চালিত গ্রেনেড হামলায় একজন নিরাপত্তারক্ষীর প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ২০১১ সালে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফ শহরে বিক্ষোভকারীরা জাতিসংঘের ৭ কর্মীকে হত্যা করে।

তালেবানের একাংশ এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক; যারা পাকিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া ঘাঁটিগুলো থেকে প্রায়ই দেশটিতে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে আসছে। তালেবানের বিদ্রোহের সময় আফগানিস্তানে ভয়াবহ কিছু হামলার জন্য এই নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়। ২০১২ সালে আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ককে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে এবং এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী, যার মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার ঘোষণা করা হয়েছিল; সেই সিরাজুদ্দিন হাক্কানি বর্তমানে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং বছরের পর বছর ধরে মার্কিন-সমর্থিত আফগান সরকারের সদস্যরা বলেছেন, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। ক্ষমতায় আসা সশস্ত্র কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানকে অন্য কোনও দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে ব্যবহার হতে দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস