ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভেস লে ড্রিয়ান

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ‘অকাস’ নামে যে জোট গঠন করেছে, তার প্রতিবাদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে ফ্রান্স। শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নির্দেশেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শুক্রবার এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভেস লে ড্রিয়ান বলেন, ‘মিত্রদের সাম্প্রতিক আচরণ তাদের অন্যান্য বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে অসম্মান করেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের ঐক্য, অংশীদারিত্ব ও ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলকে যে গুরুত্ব দিয়ে ইউরোপ বিবেচনা করে- সবকিছুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

মিত্র দেশ থেকে রাষ্ট্রদূত ডেকে পাঠানোর বিষয়টি খুবই বিরল। ইতিহাসে এই প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে ফ্রান্স। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি যেহেতু ‘ব্যতিক্রমীভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ তাই এই ‘ব্যাতিক্রমী’ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য জলপথ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বাড়তে থাকা সামরিক উপস্থিতি ও প্রভাব প্রতিহত করতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের মধ্যে একটি জোট গঠন হয়, যা পরে পরিচিতি পায় ‘অকাস’ নামে।

বুধবার অকাসের বৈঠকে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয় অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া সাইবার প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি বিষয়েও অস্ট্রেলিয়াকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আছে। অকাস চুক্তি বাস্তবায়ন হলে অস্ট্রেলিয়া হবে সপ্তম দেশ।

নতুন এই চুক্তির জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে সাবমেরিন নির্মাণ বিষয়ে আগের যে চুক্তি ছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া।

আগের চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়াকে ১২ টি সাবমেরিন তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল ফ্রান্সের; অস্ট্রেলিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর ফ্রান্স সেই চুক্তি বাতিল করেছে।

অকাসের বৈঠক সম্পর্কে আগে থেকে কাউকে কিছু জানায়নি অংশীদার তিন দেশ। ফ্রান্স এই জোট সম্পর্কে জেনেছে বৈঠক শেষ হওয়ার মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভেস লে ড্রিয়ান শুক্রবারের বিবৃতিতে বলেছেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে এমন একটি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে মিত্ররা ফ্রান্সকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ করেছে।

এদিকে রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে আনার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুতপ্ত এবং দুই দেশের মধ্যেকার উদ্ভূত জটিলতা যেন কাটে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক চেষ্টা করবে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পায়েন বলেছেন, তার সরকার ফ্রান্সের ক্ষোভের ব্যাপারটি বুঝতে পারছে এবং সরকার নিশ্চিত করতে চায়, যে অস্ট্রেলিয়া সবসময় ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ