আফগানিস্তানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ফিরেছে অল্প কিছুসংখ্যক মেয়ে শিশু শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও সেখানে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে ক্লাস করছে। কিন্তু দেশটির মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা এখনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। কবে নাগাদ তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবেন কিংবা আদৌ ফিরতে পারবেন কি না সে সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য নেই।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। বার্তাসংস্থাটি বলছে, তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও রাজধানী কাবুলের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখনও বন্ধ রয়েছে।

তালেবান কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মতো কট্টরপন্থি কোনো ধরনের নীতি এবার অবলম্বন করা হবে না। এমনকি মেয়েদের শিক্ষার ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে গোষ্ঠীটি।

তবে তালেবান এখন বলছে, মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের পৃথক শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করতে হবে।

কাবুলের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা নাজিফা বলছেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তাদের স্কুলটি চালু করতে কিছু পরিবর্তন এনেছেন তারা। তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের আগে ওই স্কুলে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা একই শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেত।

তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের পর স্কুলে আনা পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে রয়টার্সকে তিনি জানান, ‘মেয়ে শিক্ষার্থীরা সকালের শিফটে স্কুলে আসে আর ছেলে শিক্ষার্থীরা বিকেলে। এছাড়া পুরুষ শিক্ষকরা ছেলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছে আর মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন নারী শিক্ষকরা।’

তারপরও কাবুলের ওই স্কুলটির বহু মেয়ে শিক্ষার্থী এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। কারণ সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

গত শুক্রবার তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার থেকে আফগানিস্তানের স্কুলগুলো ছেলেদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে ওই ঘোষণায় মেয়েদের বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।

মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হাদিস রেজায়ি রয়টার্সকে বলছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মনোবল কমে গেছে এবং মেয়েদের শিক্ষা কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরুর বিষয়ে সরকারের ঘোষণার বিষয়ে অপেক্ষা করছেন তারা।’

শনিবার আফগানিস্তানের স্থানীয় বার্তাসংস্থা বখতার’কে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল খুলে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ স্কুল খুলতে পারে সেটি নিশ্চিত করে কিছু জানাননি তিনি।

কাবুলের একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ রেজা বলছেন, ‘নারীদের শিক্ষা একটি প্রজন্মকে গড়ে দিয়েছে। একটি ছেলে শিক্ষত হলে কেবল তার পরিবার উপকৃত হয়। তবে নারীদের শিক্ষার কারণে পুরো সমাজ উপকৃত হয়, পুরো সমাজের ওপর এর প্রভাব পড়ে।’

তিনি বলছেন, আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতর সঙ্গে যুক্ত আছি, যেন মেয়েরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে এবং সফলভাবে তাদের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে পারে।

রয়টার্স জানিয়েছে, তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর কিছু স্কুল তাদের কার্যক্রম পরিচালনার বন্দোবস্ত করতে পেরেছে। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়ে শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে দেখা গেছে। তবে আফগানিস্তানজুড়ে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো এখনো খুলে দেওয়া হয়নি।

টিএম