রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। যদিও ভোটের ফলাফল নির্দিষ্ট সময়েই ঘোষণা করা হবে, তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা, ভোটে জয় পেতে যাচ্ছে ভ্লাদিমিরি পুতিনের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি।

শুক্রবার রাশিয়ায় শুরু হয়েছিল দেশটির জাতীয় আইনসভা দুমার সদস্য নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তিনদিন ভোটগ্রহণ শেষে রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তা শেষ হয়। দেশটির ইউরোপীয় সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র কালিনিনগ্রাদে পড়েছিল সর্বশেষ ভোটটি।

রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১০ টার দিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাশিয়ার মোট ভোটারের ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি ছাড়াও অংশ নিয়েছে আরও দু’টি দল- কমিউনিস্ট পার্টি ও জাতীয়তাবাদী এলডিপিআর পার্টি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে রাশিয়াজুড়ে কয়েক দফা জরিপ চালিয়েছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। সেসব জরিপের ফলাফল বলছে, ৬৮ বছর বয়সী পুতিনকে সমর্থন দেওয়া ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির সমর্থন হ্রাস পেয়েছে দেশটিতে।

কিন্তু তারপরও, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টি ও জাতীয়তাবাদী এলডিপিআর পার্টির তুলনায় ইউনাইটেড রাশিয়ার জনপ্রিয়তা এখনও বেশি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় আইনসভা দুমার ৪৫০ আসনের মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ আসন রয়েছে ইউনাইটেড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে; আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেই গত বছর দেশের সংবিধান সংস্কারের পদক্ষেপ নেয় ক্রেমলিন।

ওই সংস্কারের ফলে ২০২৪ সালের পর পুতিন আরও দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুমোদন পান। ফলে, তার সামনে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে জীবনযাত্রার মান নিয়ে অসন্তোষ চলছে রাশিয়ায়; কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়ার প্রত্যাশিত জয়কে প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি জনসমর্থনের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন পুতিনের সমর্থকরা।

এবারের নির্বাচনের আগে ভ্লাদিমির পুতিনের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন রাশিয়ায় তার সবচেয়ে বড় বিরোধী ও সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনি। দুর্নীতির দায়ে বর্তামানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।

নাভালনির কারাবাস শুরুর পর চরমপন্থার অভিযোগ তুলে গত জুনে তার সরকারবিরোধী আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে নাভালনির মিত্রদেরও।

অন্যান্য বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা জানিয়েছেন, তারা নোংরা নির্বাচনী কৌশলের শিকার হচ্ছেন বা তাদের প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

স্ট্রবেরি ব্যবসায়ী এক কমিউনিস্ট ধনকুবের জানিয়েছেন, তাকে অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইন্ট পিটার্সবাগের বিরোধীদলীয় উদারপন্থি এক রাজনীতিক জানিয়েছেন, ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে তার মতো একই নামের আরও দুই প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির দফতর ক্রেমলিন অবশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনপীড়নের কথা অস্বীকার করেছে। নির্বাচনে যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তা আইনানুগ ও বিধিসম্মত ভাবে হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন।

পাশাপাশি, প্রার্থীদের নিবন্ধকরণ বা রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব খাটানো হয়নি বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন ও ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি- উভয়ই।

এদিকে, ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির জয়ের সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ করেছে নাভালনি সমর্থকদের। চলতি সপ্তাহে সমর্থকদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে নাভালনির ব্লগ থেকে।

সেই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যদি ইউনাইটেড রাশিয়া জিতে যায়, সেক্ষেত্রে সামনের ৫ বছর হবে আমাদের জন্য দারিদ্র্যের বছর, পরবর্তী ৫ বছর হবে দমন-পীড়নের এবং তার পরের ৫ বছরে আমরা স্রেফ হারিয়ে যাব।’

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ