জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি প্রতিরোধের লড়াইকে মনোযোগের কেন্দ্রে রেখে চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন বিশ্ব নেতারা।

মহামারির কারণে গত বছর সশরীরে অধিবেশনে দিতে পারেননি তাদের কেউ। তার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমেই অধিবেশনে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়েছিল তাদের।

এবারের অধিবেশনেও যে সবাই আসছেন- এমন নয়। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ এবারও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন। সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বাকি দুই তৃতীয়াংশ দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশন যেন করোনার ‘সুপার স্প্রেডার ইভেন্টে’ পরিণত না হয়, সেজন্য বিশ্ব নেতাদের এবারও নিউইয়র্ক আসতে নিরুৎসাহিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এবার সশরীরে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সশরীরে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন বাইডেন।

জাতিসংঘে এবারের অধিবেশনে তথাকথিত একটি ‘অনার সিস্টেম’ও থাকছে। সেই অনুযায়ী যিনিই অধিবেশন হলে ঢুকবেন তাকেই টিকাপ্রাপ্ত বলে ধরে নেওয়া হবে, কোনো অতিথির কাছ থেকে এ বিষয়ক কোনো প্রমাণপত্র চাওয়া হবে না। 

কিন্তু অধিবেশনে প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিল যখন বক্তব্য দেবে, তখনই মূলত এই ‘অনার সিস্টেম’ ভেঙে পড়বে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কারণ, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো কোভিড টিকা নিয়ে সন্দিহান। গত সপ্তাহে তিনি ঘোষণা করেছেন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে, তাই তার টিকা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

তবে ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট হয়তো তার মত পরিবর্তন করতে পারেন, এমনটা আশা করছে জাতিসংঘ। তার জন্য জাতিসংঘের সদরদপ্তরের বাইরে নিউ ইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষের একটি ভ্যান থাকবে, যেখানে সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের কোভিড টিকা দেওয়া হবে।

বিশ্বজুড়ে টিকাবণ্টনে অসমতা নিয়ে বরাবরই সরব জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে সম্প্রতি তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘অধিবেশনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকরা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ থেকেই বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে টিকাবণ্টনে কী পরিমাণ অসাম্য বিরাজ করছে।’

আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে যেন বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার ডোজ পায় সেজন্য অধিবেশনে আগত বিশ্ব নেতাদের চাপ দেওয়া হবে উল্লেখ করে রয়টার্সকে গুতেরেস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ৫৭০ কোটি ডোজ করোনা টিকা ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে আফ্রিকা পেয়েছে মাত্র ২ শতাংশ টিকা। এটা একই সঙ্গে দুঃখজনক ও আপত্তিকর।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকা বণ্টনে অসাম্য দূর করা এবং দরিদ্র দেশগুলো যেন প্রয়োজনীয় টিকার ডোজ পায় তা নিশ্চিতে বুধবার ওয়াশিংটনে বিশ্ব নেতা ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবেন বাইডেন।

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে বাইডেন নিউ ইয়র্কে মাত্র ২৪ ঘণ্টা থাকবেন; এর মধ্যেই তিনি সোমবার গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার ভাষণও দেবেন; বোলসোনারোর পরেই তার ভাষণ দেওয়ার কথা।

বাইডেনের জাতিসংঘ দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, “এবারের অধিবেশনে করোনা মহামারির সমাপ্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ ছাড়াও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও একটি নিয়মতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট এই সবগুলো বিষয়েই আলোকপাত করবেন।’

মহামারির কারণে এবার জাতিসংঘে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম থাকবে; মূল অধিবেশনের বাইরে যেসব অনুষ্ঠান হবে তার বেশিরভাগই হয় ভার্চুয়াল নয়তো ভার্চুয়াল ও শারীরিক উপস্থিতি মিলিয়ে হবে।

অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এবারের অধিবেশনে আফগানিস্তান ও ইরান নিয়েও আলোচনা হবে।

অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের ভাষণের আগে সোমবার গুতেরেস ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উদ্যোগে সোমবার একটি শীর্ষ বৈঠক হবে, যার লক্ষ্য হলো আগামী ৩১ অক্টোবরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন কপ২৬ কে সফল করা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কাছাকাছি আছে- বিজ্ঞানীদের এ সতর্কবার্তার মধ্যে এবারের কপ২৬ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আরও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নেওয়া, সেগুলো বাস্তবায়নে অর্থ সংগ্রহ ও তা পৌঁছে দেওয়া।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছিলেন, ‘আমরা এখন সংকটের অতল গহ্বরের কিনারায় আছি। তাই এখনই বিপদ সংকেত পড়ে ফেলার আদর্শ সময়।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ