ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের চাপে মুসলিম ধর্মাবলম্বী প্রেমিককে জুতা মারতে বাধ্য হয়েছেন এক হিন্দু তরুণী। ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।

ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মিরাট শহরে শুক্রবার এই ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মিরাটের এক জনাকীর্ণ এলকায় একটি গাছের নীচে বসেছিলেন ওই যুগল। ওই এলাকার এক দোকানদার এটি দেখতে পেয়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের স্থানীয় কর্মীদের ফোন করেন।

দোকানদারের ফোন পেয়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিরাট শাখার প্রেসিডেন্ট শচীন সিরোহির নেতৃত্বে একদল কর্মী ঘটনাস্থলে আসেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ওই যুগলকে আলাদা করে প্রথমে যুবককে মারধর করেন মঞ্চের কর্মীরা। তারপর তরুণীকে আদেশ দেন- তিনি যেন নিজের জুতা খুলে ওই যুবককে আঘাত করেন। জাগরণ মঞ্চের ক্ষুব্ধ কর্মীদের মারধর থেকে প্রেমিককে বাঁচাতে সেই আদেশ মেনে নিয়ে জুতা দিয়ে প্রেমিকের গালে আঘাত করেন ওই তরুণী।

আরও পড়ুন: অনলাইন থেকে শুক্রাণু কিনে ‘ই-বেবি’র জন্ম দিলেন নারী

কিন্তু যথেষ্ট জোরে না হওয়ায় ওই তরুণীকে ফের আঘাত করতে বলা হয়। ৫৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিওচিত্রে তরুণীর উদ্দেশ্যে মঞ্চের এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা কিছু হলো! আরও জোরে মারো তাকে।’

তাদের আদেশ মেনে আর একটু জোরে প্রেমিককে ফের আঘাত করেন ওই তরুণী।

তারপর ওই কর্মী বলেন, ‘এখানে আমরা যারা আছি, সবাই তোমার ভাই। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি, তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। শরীরের সব শক্তি দিয়ে তাকে আঘাত করো।’

একই সময়ে অপর এক কর্মী সেই মুসলিম যুবকের উদ্দেশে ধমক দিয়ে বলেন, ‘এই মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর সাহস কোত্থেকে পেলি তুই?’ আরেক কর্মী বলেন, ‘এই ব্যাটার ফোনে মেয়েটির ছবি আছে।’ ঠিক এ জায়গাতে শেষ হয় ভিডিও চিত্রটি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, তরুণী আঘাত করার পরও কানে ধরে এবং হাঁটু গেড়ে ওই গাছের তলায় প্রায় আধাঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল যুবককে এবং এই অবস্থায় চলেছিল মারধর।

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে মঞ্চের কর্মীরা পুলিশকে জানায়, মুসলিম এই যুবক ওই তরুণীর সঙ্গে গাছের তলায় জোর জবরদস্তিমূলক আচরণ করছিল। তবে ওই তরুণী পুলিশকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ওই যুবক তার সঙ্গে কোনো বাজে আচরণ করেননি এবং তিনি নিজের ইচ্ছা ও সজ্ঞানে গাছের তলায় ওই যুবকের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন।

আরও পড়ুন : মাঝ সমুদ্রে চার দিন ধরে দুই সন্তানকে স্তন্যপান করিয়ে মৃত্যু মায়ের

মিরাট শহরের পুলিশ কর্মকর্তা দেবেশ সিং টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘ওই তরুণী আমাদের জানিয়েছেন, মারধোরের শিকার ওই যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে এবং ওই দিন তিনি নিজের ইচ্ছেতেই ওই যুবকের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ যে অভিযোগ করেছিল,তার কোনো ভিত্তি নেই।’

এ ঘটনায় দাঙ্গা, মারধোর ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগে শচীন সিরোহি ও তার অনুগত কর্মীদের  বিরুদ্ধে ইতোমধ্য একটি মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে দেবেশ সিং বলেন, ‘শচীন সিরোহি ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’

তবে শচীন সিরোহি জানিয়েছেন তিনি কোনো অন্যায় করেননি। এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘ আমরা শুধু আমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজনকে সমাজবিরোধী উপাদান থেকে বাঁচাতে চেয়েছি।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএমডব্লিউ